এবার দেশি গরুতেই জমজমাট পঞ্চগড়ের পশুহাট
পঞ্চগড়ের তিন দিকে প্রায় ২৮০ কিলোমিটার ভারতীয় সীমান্ত এলাকা। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর জেলার বিভিন্ন পশুহাট ভারতীয় গুরুর দখলে থাকতো। কিন্তু এবার সেসব পশুহাটে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। দেশি গরুতেই জমজমাট হাটগুলো। তবে মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি ক্রেতাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) তিনটি ব্যাটালিয়ন নিয়ন্ত্রণ করছে। সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আসা ঠেকাতে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়ন, ঠাকুরগাঁও ৫০ ব্যাটালিয়ন এবং নীলফামারী ৫৬ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল বাড়িয়েছে।
বিভিন্ন পশুহাট ঘুরে দেখা গেছে, জেলা শহরের রাজনগর হাট, উপজেলা সদরের জগদল হাট, বোদা উপজেলার নগরকুমারী হাট, তেঁতুলিয়া উপজেলার তেঁতুলিয়া ও শালবাহান হাট, দেবীগঞ্জ উপজেলার কালীগঞ্জ হাট, দেবীগঞ্জ হাট, ভাউলাগঞ্জ হাট ও আটোয়ারী উপজেলার ফরিকরগঞ্জ হাট বেশ জমে উঠেছে। বেচাকেনাও হচ্ছে প্রচুর। হাটে বড় বড় কিছু গরু উঠলেও ক্রেতারা কিনছেন মাঝারি সাইজের গরু।
গো-খাদ্যের দাম বাড়লেও গরুর দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ বিক্রেতাদের। আর ক্রেতারা বলছেন, এবারও গরুর দাম বেশি।

এদিকে পশুহাটে প্রতারণা থেকে মুক্তির জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের উদ্যোগে বসানো হয়েছে অস্থায়ী জালটাকা শনাক্তকরণ বুথ। অসুস্থ ও গর্ভবতী গরু শনাক্তের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে বসানো হয়েছে ভেটেরিনারি ক্যাম্প। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি ইজারাদারের পক্ষ থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতন করতে হাটজুড়ে করা হচ্ছে মাইকিং।
উপজেলা সদরের ব্যারিস্টার বাজার এলাকার গৃহস্থ আবুল হোসেন বলেন, ‘কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে দুটি গরু বড় করেছি। ৩৫ হাজার টাকায় কেনা দুটি গরু এক বছরের বেশি সময় ধরে রেখে ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এরপরও আশা অনুযায়ী লাভ করতে পারিনি। কারণ গরুর খাদ্যের দাম বাড়ায় খরচ বেশি হয়ে গেছে।’
কোরবানির গরু কিনতে আসা জেলা শহরের মসজিদপাড়া মহল্লার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে প্রচুর গরু উঠেছে। প্রতি বছর দেশীয় জাতের গরু কিনি। এবারও ৫৫ হাজার টাকায় একটা গরু কিনেছি। কিন্তু দাম গতবারের তুলনায় কিছুটা বেশি বলেই মনে হচ্ছে।’

পঞ্চগড় রাজনগর হাটের ইজারাদার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এবার হাটে ভারতীয় গরু নেই। কারণ এবার দেশীয় গরুর আমদানি প্রচুর। সবার পছন্দও দেশীয় গরু। শান্তিপূর্ণভাবেই এখানে কোরবানির পশু বেচাকেনা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন। শেষ মুহূর্তে দেশীয় জাতের গরু বেচাকেনার মাধ্যমেই জমে উঠেছে পশুহাট।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল হাই জাগো নিউজকে বলেন, জেলায় এবার কোরবানির চাহিদার চেয়ে গবাদিপশু সরবরাহ অনেক বেশি। আসন্ন কোরবানির জন্য গবাদিপশুর চাহিদা রয়েছে ৮৯ হাজার ৮৭৯টি। তবে প্রস্তুতি রয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ২৭২টি গবাদিপশু। এরমধ্যে গরু ৪১ হাজার ২৪৬টি, মহিষ ৩৪টি, ছাগল ৮৪ হাজার দুটি এবং ভেড়া ৯ হাজার ৯৯০টি। চাহিদা অনুযায়ী প্রায় ৪৫ হাজার কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহফুজুল হক জাগো নিউজকে বলেন, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে সীমান্তে টহল বাড়িয়েছি। কোনোভাবেই যাতে ভারতীয় গরু বা অন্য কোনো চোরাকারবারি প্রবেশ করতে না পারে এজন্য সজাগ রয়েছি। ঈদের পরও সীমান্তে অপতৎপরতা ঠেকাতে যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।
সফিকুল আলম/এসজে/জেআইএম