ছেলে কবরে, ঈদ আনন্দ নেই মা জমিলা বেগমের
আর মাত্র তিনদিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রতিটি পরিবারে ঈদের আনন্দ। কিন্তু আনন্দ নেই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত মাসুদ রানার (৩৭) পরিবারে। ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা জমিলা বেগম। এদিক-সেদিক খুঁজে ফিরছেন ছেলের প্রিয় মুখখানা।
মা জমিলা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাবা নেই ঈদও নেই। তারে ছাড়া আমি অসহায়। গত ঈদে পোলা আমার বাড়িতেই ঈদ করছে। আজ সে কবরে। তারে ছাড়া বাঁচা বড় দায়।’
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর ভাটারা ইউনিয়নের বয়সিং গোপীনাথপুর গ্রামের খলিলুর রহমান ও জমেলা বেগম দম্পতির তিন ছেলের মধ্যে সবার বড় ছিলেন মাসুদ রানা। মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। ২০১১ সালে বিয়ে করেন। পরে আবারও পাড়ি জমান বিদেশে। এবার পাঁচ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে আসেন।

২০১৫ সালে ছুটে যান বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। চাকরি নেন সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে। সেখানে তিনি এক সপ্তাহ দিনে এবং পরের সপ্তাহ রাতে ডিউটি করতেন। গত ৪ জুন রাতে ওই ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাতে নাইট ডিউটিতে ছিলেন মাসুদ রানা। বিস্ফোরণে তিনি গুরুতর দগ্ধ হন। তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ জুন ভোরে মারা যান।
মাসুদের স্ত্রী সুমী খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০০৪ সালে সৌদি আরবে পাড়ি জমান মাসুদ। তারপর ২০১১ সালে বাড়িতে এসে বিয়ে করেন। দুই বছর পর জন্ম নেয় বড় মেয়ে সামিয়া (৭) এবং ২০১৯ সালে জন্মগ্রহণ করে রুহান (২)। পরিবারের প্রতি তার ছিল অগাধ ভালোবাসা এবং মমত্ববোধ। আজ তাকে ছাড়া ঈদ পালন করা যেন স্বপ্নের মতো লাগছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বড় মেয়ে সামিয়াকে ভাটারা মেধা বিকাশ কিন্ডারগার্টেন ভর্তি করে দিয়েছি। কিন্তু রুহান এখনো অনেক ছোট। বাবার খুব আদরের সন্তান রুহান। ছেলের কান্না যেন থামছেই না। প্রতিদিন কবর পাড়ে গিয়ে বাবাকে ডাকাডাকি করে। অবুঝ মন তাকে এনে দেওয়ার বায়না করে।’
মাসুদ খুবই শান্ত প্রকৃতির ছিলেন বলে জানান চাচি আঙ্গুরি বেগম। তিনি বলেন, ‘পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিল মাসুদ। আর মাত্র তিনদিন পর কোরবানির ঈদ। অথচ আমাদের পরিবারে কোনো ঈদের আনন্দ নেই। ছেলেটি গত কোরবানির ঈদে একদিন আগে বাড়িতে এসেছিল।’

মাসুদের বাবা খলিলুর রহমান বলেন, ‘কিছুই ভালো লাগে না, শুধু ছেলের মুখখনা মনে পড়ে। ছেলেডা সব ঈদেই সবকিছু করতো। আজ সে নাই, আমাদের ঈদও নাই।’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন খলিলুর রহমান।
এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপমা ফারিসা জাগো নিউজকে বলেন, ‘কন্টেইনার ডিপোতে নিহত মাসুদের পরিবারকে শ্রম অধিদপ্তর থেকে ২ লাখ, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে ৫০ হাজার, বিএম কন্টেইনার ডিপো থেকে ১০ লাখ এবং জামালপুর জেলা প্রশাসন ১ লাখসহ মোট সাড়ে ১৩ লাখ টাকা সহযোগিতা করা হয়েছে। এবারের ঈদে তাদের জন্য আলাদা করে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে না।’
নাসিম উদ্দিন/এসআর/জিকেএস