হাওরে কৃষকের বাড়িতে এখন শুধু ধানপচা গন্ধ

লিপসন আহমেদ লিপসন আহমেদ , সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত: ১২:৪৪ পিএম, ১৮ জুলাই ২০২২

এবারের বন্যায় সরকারি হিসাবে সুনামগঞ্জের ৬৮ হাজার কৃষকের গোলার ধান ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে ছোট কৃষকরা যেমন কষ্টে পড়েছেন, বড় কৃষকরাও রয়েছেন আরো বেশি বেকায়দায়। সামর্থ্যবান অনেক কৃষকের বাড়ি ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। বাড়ির আশপাশে শুধু ধানপচা গন্ধ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের বড় গৃহস্ত আব্দুস সালাম। গেল বোরো মৌসুমে ধান পেয়েছেন দুই হাজার মণেরও বেশি। বাড়ির গোলায় রেখেছিলেন ২০০ মণ ধান। বাকি ধান ছিল পাশের অটো রাইসমিলে। বাড়ির গোলা ডুবে চাল ছুঁয়েছে পানি। মিলের ধানও ডুবেছে। গোলায় থাকা ২০০ মণ ধান পচে এলাকাজুড়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে। দুর্গন্ধ আছে মিলের আশপাশেও।

আব্দুস সালামের বাড়ির কৃষি শ্রমিক বাচ্চু মিয়া ও মোমিনা বেগম ছাড়া ১৬ জুন গভীর রাতের পর বাড়ি ছেড়ে যাওয়া আর কেউ এখনো ফেরেননি।

jagonews24

কৃষক আব্দুস সালামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে নীরবতা। যে বাড়িতে এখন সবার কর্মব্যস্ত থাকার কথা সেই বাড়িগুলো একদম ফাঁকা। নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও হাওরের ধান কৃষকরা ঘরে তুললেও সেই ধান নিয়ে গেছে বানের পানি।

মোমিনা বেগম ১৬ জুন গভীর রাতের ভয়াবহতার বর্ণানা দিয়ে জাগো নিউজকে বলেন, মাথার ওপর দিয়ে ঢেউ গেছে। ধানের গোলার ইটের দেওয়াল ভেঙে ভেসে গেছে ধান। বন্যার পানি চাল ছুঁয়েছে। মালিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ওই দিনের পর মালিক আর বাড়িতে আসেননি। এখন পচা ধান হাতিয়ে দেখছি।

jagonews24

মোমিনা বেগমের পাশে দাঁড়ানো কৃষক মতিউর রহমানও ধান পচার কষ্ট ও ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির বর্ণানা দিয়ে বলেন, কৃষককে রক্ষা করতে হলে পুরোনো ব্যাংক ঋণ পরিশোধের চাপ না দিয়ে নতুন কৃষি ঋণ দিতে হবে। না হলে চাষাবাদে ফেরা কঠিন।

দেখার হাওর পাড়ের কৃষক সেলিম মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, পানি এসে সব কিছু নিয়ে গেল। হাওরে যখন ধান ছিল তখন এক আতংক ছিল। আতংক নিয়ে যা কিছু ধান ঘরের গোলায় তুললাম তখন পানি ধানের সঙ্গে ঘরটাও ভাসিয়ে নিয়ে গেল।

কৃষি অফিস বড় কৃষকের সংখ্যা দু’শোর বেশি হবে না দাবি করলেও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর কৃষকরা এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন।

jagonews24

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জাগো নিউজকে জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬৮ হাজার ৫১১ জন কৃষকের তালিকা করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা পেলে তাদেরকে প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হবে। কৃষকদের জমির পরিমাণ অনুযায়ী কৃষিঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ঋণ দেওয়ার জন্য প্রত্যয়ন দেবেন তারা।

এদিকে দেখার হাওরপাড়ের আব্দুল্লাপুর, সাধকপুর, দরিয়াবাজ, ছনপুর, গোয়াছড়া, ইছাগড়ি, ভবানিপুর ও লালপুরের ছোটবড় কৃষক বাড়িতে একই চিত্র। বড় কৃষকের বাড়ির পাশ দিয়ে গেলেই ধানপচা গন্ধ নাকে লাগছে।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।