পুলিশ সদস্য হত্যায় মেহেরপুরে চারজনের যাবজ্জীবন
মেহেরপুরে পুলিশ সদস্য আলাউদ্দীন হত্যা মামলায় ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদাণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই ঘটনায় মাদক মামলায় ওই চারজনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালেতের বিচারক রিপতি কুমার বিশ্বাস এ রায় দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি কাজী শহীদুল হক।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কুষ্টিয়া জেলার বলিদাপাড়া গ্রামের আনিচ, তাহাজ্জত হোসেন, শাকিল হোসেন ও রুবেল হোসেন।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মাদক মামলায় অপর দুই আসামি সিদ্দিক ও আতিয়ারকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৪ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার সময় মেহেরপুর গাংনী উপজেলার পিত্বতলা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্য এএসআই সুবির রায়ের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্য আলাউদ্দীন ও আনছার সিপাহি জাহিদ হোসেনসহ রাত্রিকালিন পাহারার জন্য সাহেবনগর গ্রামের মোড়ে পৌঁছান। এ সময় খবর আসে কাজিপুর গ্রাম হয়ে ফেনসিডিলসহ একটি মাইক্রোবাস বামুন্দীর দিকে আসছে।
এ সময় সেখানে গাছের তিনটি গুড়ি দেওয়া হয় মাইক্রোবাসটি থামানোর জন্য। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মাইক্রোবাসটি ঘটনাস্থলে আসে। গাড়িটি থামানোর জন্য সিগন্যাল দেয় পুলিশ। মাইক্রোবাসটি সিগন্যাল অমান্য করে যাওয়ার চেষ্টা করে। গাড়িটি না থামলে ওই পুলিশ সদস্য তার শর্টগান দিয়ে আঘাত করে মাইক্রোবাসটির চালকের দরজাটির গ্লাস ভেঙে ফেলে।
এ সময় চালক ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেন আলাউদ্দীনকে। এতে তিনি ছিটকে মাইক্রোবাসের বাম্পারের ওপর পড়েন। ওই গাড়ি থেকে দুটি বস্তা ফেলে দেন গাড়ির চালক ও তার সঙ্গে থাকা সদস্যরা।
এ সময় আলাউদ্দীনকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় কুষ্টিয়া হাসপাতালে। মাইক্রোবাসটি ধরার জন্য বামুন্দী পুলিশ গাড়িটিকে ধাওয়া করে। এতে অংশ নেয় কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানা। একপর্যায়ে গাড়িটি মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়া গ্রামের আনিচের বাড়ির পাশে বাঁশ বাগানের পাশে ফেলে তারা পালিয়ে যায়। এসময় ওই গাড়ি থেকে ৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। আর ফেলে দেওয়া দুটি বস্তা থেকে উদ্ধার করা হয় ৩৪০ বোতল ফেনসিডিল।
এদিকে ওই ঘটনায় রাতেই কুষ্টিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পুলিশ সদস্য আলাউদ্দীন। ওই ঘটনায় বলিদাপাড়ার আনিচ ও শাকিল হোসেনকে আসামি করে ২৫ জুলাই গাংনী থানায় মাদক ও হত্যা মামলা দায়ের করেন ক্যাম্প ইনচার্য এএসআই সুবির রায়।
দীর্ঘ বিচার শেষে হত্যা মামলায় ১৬ জন ও মাদক মামলায় ১২ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেন। হত্যা মামলায় ওই ৪ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং মাদক মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড ও অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করে আদালত। আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেন।
আসিফ ইকবাল/এফএ/জিকেএস