দুয়ার খুললেও পর্যটক কম টাঙ্গুয়ার হাওরে
বন্যার পর দেশের অন্যতম বৃহৎ জলাভূমি সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ লেকসহ (নীলাদ্রি লেক) সীমান্তের পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। তবে এখনো সেভাবে জমেনি পর্যটন স্পটগুলো।
জানা যায়, রূপে-গুণে অনন্য টাঙ্গুয়ার হাওর। পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। প্রাকৃতিক বন, পরিযায়ী ও দেশি পাখির নিরাপদ আবাসস্থলও এটি। দেশের অন্যতম সুন্দর ও জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ সম্ভাবনাময় একটি জলাভূমি এটি। অপার সৌন্দর্যের টাঙ্গুয়ার হাওর ১৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হাওরের সম্পদ রক্ষা ও সংরক্ষণে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি রয়েছে বেসরকারি উদ্যোগও।
সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার বিশাল এলাকা নিয়ে এই হাওরের অবস্থান। ২টি উপজেলার ৪ ইউনিয়নের ১৮টি মৌজা মিলে হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর। হাওরে ছোট বড় ১০৯টি বিল আছে। তবে প্রধান বিল ৫৪টি।

হাওরের ভেতরে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য খাল ও নালা। বর্ষায় সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ওই সময় হাওর রূপ নেয় সমুদ্রে। হাওর এলাকার ৮৮টি গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ হাওরের ওপর নির্ভরশীল। হাওরের উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড়। এই পাহাড় থেকে ৩৮টি ঝরণা নেমে এসে মিশেছে টাঙ্গুয়ার হাওরে।
শুধু তাই নয়, টাঙ্গুয়ার হাওরে ঢোকার একাধিক প্রবেশ পথ আছে। যারা তাহিরপুরের লাউড়েরগড় হয়ে যাবেন তাদের জন্য বাড়তি পাওয়া আছে। এই পথে আছে পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা অপরূপা যাদুকাটা ও শহীদ সিরাজ লেক, আছে শিমুল বাগানও।
এদিকে ভয়াবহ বন্যার পানি সরার পর ৩ আগস্ট পর্যটনের দুয়ার খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রশাসনের কিছু নির্দেশনা মেনে হাওরে যেতে হবে পর্যটকদের। প্রথম বারের মতো ১০৭ টি নৌকাকে নিবন্ধনের মাধ্যমেই হাওরে পর্যটক নিয়ে ঘুরতে অনুমতি দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। যারা নিবন্ধিত নৌকা নয় তাদের হাওরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। যদি কেউ প্রবেশ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

টাঙ্গুয়ার হাওরে আসা মৌলভীবাজারের পর্যটক রাহি মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ভয়াবহ বন্যার পর আজ টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে এসেছি। তবে প্রতি বছর যেভাবে হাওরে পর্যটকরা ঘুরতে আসে এই বছর তেমনটা নেই।
টাঙ্গুয়ার হাওরে আসা ঢাকার পর্যটক হাসান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, করোনা ও বন্যার কারণে টাঙ্গুয়ার হাওরের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল বহুদিন, যার কারণে পর্যটকদের আসতে দেওয়া হয়নি। এখন আসছেন পর্যটকরা। তবে অন্য বছরের তুলনায় কম মনে হচ্ছে।

টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, অন্যান্য বছর এই সময়ে পর্যটকদের ভিড় থাকতো। পর্যটকবাহী নৌকা আগে থেকেই বুকিং থাকতো, ভাড়া করে অন্যান্য এলাকা থেকে ট্রলার এনে পর্যটকদের দেওয়া লাগতো। এবার ঘাটের ট্রলারগুলোই বসা আছে।
পর্যটক কেন আসতে চাচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর্যটকদের হাওরে ঘুরাঘুরি বন্ধ থাকায় বর্তমানে টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটক আগমনে ভাটা পড়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওর যে খুলে দেওয়া হয়েছে সেটা বেশি করে প্রচার করতে হবে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ১০টি শর্ত মেনে পর্যটকরা টাঙ্গুয়ার হাওরে আসা শুরু করেছেন। এখন পর্যটক আসা ক্রমেই বাড়বে। আশা করি কিছুদিনের মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যাবে।
এফএ/এএসএম