তলিয়ে যেতে পারে কয়রা, আতংকে উপজেলাবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক খুলনা
প্রকাশিত: ০৩:৩৭ পিএম, ১৫ আগস্ট ২০২২

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে খুলনার নদ-নদীগুলোর পানি। কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া, আড় পাঙ্গাশিয়া, শিবসাসহ বেশিরভাগ নদ-নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার চার ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হুমকির মুখে রয়েছে উপজেলার প্রায় সব বাঁধ। পানি আরও বৃদ্ধি পেলে তলিয়ে যেতে পারে গোটা কয়রা উপজেলা। এ অবস্থায় আতংকে রয়েছেন উপজেলাবাসী।

জোয়ারের পানির চাপে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের দক্ষিণ বেদকাশি গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে এরই মধ্যে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন সহস্রাধিক মানুষ।

এদিকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সোমবার (১৫ আগস্ট) সকাল থেকে বাঁধ মেরামতের কাজ করছেন এলাকাবাসী। বাঁধ মেরামতে নেতৃত্ব দিচ্ছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল। তিনি বলেন, বাঁধগুলো যথাসময়ে সঠিকভাবে মেরামত না করার কারণে বারবার ভেঙে যায়। এতে এলাকার বিপুল ক্ষতি হয়। স্থায়ীভাবে বাঁধ মেরামত করার দাবি জানান তিনি।

jagonews24

ইউপি সদস্য ওসমান গনি বলেন, প্রতি বছরই বাঁধ ভেঙে যায় আর জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হয়। স্থায়ীভাবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে এলাকাবাসী এমনিতেই বিপর্যস্ত। তার ওপর যদি প্রতি বছর ভাঙনের সম্মুখীন হতে হয় তাহলে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়বে আমাদের।

স্থানীয় বাসিন্দা শোয়েব, আশরাফুল ইসলাম নুর ও আসাদ আলী অভিযোগ করে বলেন, ষাটের দশকে নির্মিত বেড়িবাঁধ স্থায়ীভাবে মেরামতের কোনো জোরালো উদ্যোগ দেখা যায়নি। কখনো কখনো দায়সারা কাজ হয়েছে। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা মানুষের কষ্টের কথা কখনোই বিবেচনায় নেননি। এখন প্রবল জোয়ারে আবারও বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে রিংবাঁধ আবারও ভেঙে গেছে জানিয়ে দক্ষিণ বেদকাশী এলাকার স্বাধীন সমাজকল্যাণ যুব সংস্থার সভাপতি মো. আবু সাঈদ খান বলেন, দক্ষিণ বেদকাশীর চরামুখা এলাকায় ওয়াপদার ২০০ মিটার রিংবাঁধ শনিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে জোয়ারে ভেঙে যায়। বাঁধ না ভাঙলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঘুম ভাঙে না। দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নবাসীর লোনা পানির হাত থেকে মুক্ত করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবার দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

jagonews24

কয়রা সদরের প্যানেল চেয়ারম্যান এস এম লুৎফর রহমান বলেন, সুতির কোনা গেট ও তার আশপাশ এলাকায় দুপুরে অস্বাভাবিক জোয়ারে পানিতে বাঁধের বিভিন্ন স্থান দিয়ে চুইয়ে ও ছোট-বড় ছিদ্র দিয়ে নদীর পানি এলাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। আজও অনেক জায়গায় পানি প্রবেশ করছে। স্থানীয় জনগণ বিভিন্ন জায়গায় মাটি দিয়ে পানি ঢোকার পথ বন্ধ করছেন। কিন্তু আরও পানি বৃদ্ধি পেলে এই বাঁধ টিকিয়ে রাখা যাবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মশিউল আবেদীন বলেন, পানি ঢোকার সংবাদ শুনে প্রথম থেকেই আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির সহায়তায় সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকালয়ে পানি যাচ্ছে ও বেড়িবাঁধের একটি জায়গায় ভেঙে গেছে। পানি আটকানোর কাজ চলছে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, স্বেচ্ছাশ্রমে রিংবাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। দরকার হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আলমগীর হান্নান/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।