সার্ভার হ্যাক করে ৮ শতাধিক ভুয়া জন্মসনদ তৈরি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ০৯:৪৬ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২২

শরীয়তপুরে দুইটি ইউনিয়ন পরিষদের সার্ভার হ্যাক করে ৮০৮টি ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরির ঘটনা ঘটেছে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ওই দুই ইউপির চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, জন্মনিবন্ধন সার্ভার হ্যাক করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে এদেশের নাগরিক বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় অনেকেই।

ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নড়িয়া উপজেলার বিঝারি ও ফতেজঙ্গপুর ইউনিয়ন পরিষদের জন্মনিবন্ধন সার্ভার হ্যাক হয়েছে। গত ১৫ আগস্ট বিঝারি ও ১৯ আগস্ট ফতেজঙ্গপুর ইউনিয়ন পরিষদের জন্মনিবন্ধন সার্ভার হ্যাক হয়। এ ঘটনায় জন্মনিবন্ধন সংশ্লিষ্ট কাজ যেমন- নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ, পাসপোর্টসহ অন্যান্য কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

সার্ভার হ্যাক হওয়ার ঘটনায় নড়িয়া থানায় অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানরা। অভিযোগ বলা হয়েছে, জন্মনিবন্ধন পাসওয়ার্ড হ্যাক করে বিঝারিতে ৩৯২টি ও ফতেজঙ্গপুরে ৪১৬টিসহ মোট ৮০৮টি ভুয়া জন্মনিবন্ধন রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। জন্মসনদ ডাউনলোড করে দেখা যায়- মুন্সিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে যা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবরা অবগত নন।

বিঝারি ইউনিয়ন পরিষদে জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে আসা মিজানুর রহমান, নিলয়সহ কয়েকজন বলেন, কয়েকদিন ধরে জন্মনিবন্ধন নিতে এসে ফিরে যাচ্ছি। এসে শুনলাম সার্ভার হ্যাক হয়েছে। জন্মনিবন্ধন সনদের খুবই প্রয়োজন ছিল। কবে সার্ভার ঠিক হবে কে জানে। সার্ভার হ্যাক করে রোহিঙ্গাদের এদেশের নাগরিক বানানোর চেষ্টা করছে কি না তা কে জানে?

বিঝারি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোলিনা নাসরিন বলেন, এক অপরিচিত ব্যক্তি আমার মোবাইলের ইমোতে কল দিয়ে বলেন, আপনাদের জন্মনিবন্ধন সার্ভার হ্যাক হয়েছে আপনি জানেন? পরে আমি সার্ভারে ঢুকে দেখি সত্যিই হ্যাক হয়েছে।

ফহেজঙ্গপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শওকত হোসেন জুয়েল বলেন, গত ১৯ আগস্ট সকালে আমার ইউনিয়নের জন্মনিবন্ধন সার্ভার হ্যাক হয়। আমি তাৎক্ষণিক নড়িয়া থানায় অভিযোগ করি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাই।

বিঝারি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলী আহাম্মেদ কাজী বলেন, বর্তমানে আমার ইউনিয়নের জন্মনিবন্ধন সার্ভার বন্ধ আছে। আমার ইউনিয়নের অনেকের জন্মনিবন্ধন অতি জরুরি কিন্তু দিতে পারছি না।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুরের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, আমার ধারণা, রোহিঙ্গারা যে কোনো উপায়ে হোক সার্ভার হ্যাক করে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে। যারা এ ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের অচিরেই যদি শনাক্ত করা না যায় তাহলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবি, দ্রুত হ্যাকারদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হোক।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নিহার রায় বলেন, ভুয়া জন্মনিবন্ধন দিয়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবুও আমরা ওই সময়ের মধ্যে যে জন্মনিবন্ধন হয়েছে তা যাচাই-বাছাই করবো। আমাদের উপজেলা অফিসের পুরো সেট-আপটাই নতুন। নির্বাচন অফিসের কেউ সংশ্লিষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাশেদুজ্জামান বলেন, দুই ইউনিয়নে জন্মনিবন্ধন সার্ভার হ্যাক হয়েছে শুনেই তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। ভুয়া রেজিস্ট্রেশনগুলো বাদ দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

মো. ছগির হোসেন/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।