ওএমএস
৩০ টাকা কেজি চাল কিনতে ভোর ৪টায় লাইন
পঞ্চগড় জেলা শহরের কায়েরপাড়া মহল্লার রিকশাচালক জহিরুল ইসলাম। ৩০ টাকা কেজি দরে ভর্তুকি মূল্যে চাল কিনতে ভোর ৪টায় এসে ওএমএস ডিলারের দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়ান। সকাল ১০টায় তিনি ৩০ টাকা কেজি দরে পাঁচ কেজি চাল এবং ১৮ টাকা কেজিতে আড়াই কেজি আটা কেনেন। পরে খুশি হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
জহিরুলের মতো পঞ্চগড় পৌরসভা এলাকার কায়েতপাড়া, ইসলামবাগ, ডোকরোপাড়া শিংপাড়া এবং ব্যারিস্টার বাজার এলাকার রাজমিস্ত্রির সহকারী জরিফন, হাসিনাসহ কয়েকশ নারী-পুরুষ কম দামে চাল-আটা পেতে ভোর ৪-৫টা থেকে লাইনে দাঁড়ান। এদের মধ্যে অনেকে ৬-৭ ঘণ্টা লাইনে থেকেও চাল না পাওয়ার আশঙ্কা করেন। এরা সবাই কর্মজীবী।
কেউ রিকশা চালান, কেউ রাজমিস্ত্রির সহকারী আবার কেউ বিভিন্ন কাজে দিনমজুরি দেন। দিন শেষে ৩০০-৩৫০ টাকা আয় করেন তারা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এ আয় দিয়ে তাদের সংসার চলে না। এ কারণে সরকারের খাদ্যবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় কম দামে চাল, ডাল, আটা, তেল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে যান তারা।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ে টিসিবি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় এক লাখ ২০ হাজার ৭৮ জনের মধ্যে খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম। স্থানীয় সরকারি স্টেডিয়ামের সামনে উদ্বোধনী এ অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল হক, পৌরসভা মেয়র জাকিয়া খাতুনসহ জনপ্রতিনিধি, খাদ্য বিভাগ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এই কর্মসূচির আওতায় জেলার পাঁচ উপজেলায় ৩০ টাকা কেজি দরে প্রতি পরিবার মাসে দুইবার ১০ কেজি চাল কিনতে পারবে। এছাড়া ৬৯ হাজার ৭৫ জন টিসিবি কার্ডধারী ডাল ও তেলের পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাল কিনতে পারবেন। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৫১ হাজার ৩ জন নিবন্ধিত ভোক্তা ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি করে তিন মাস চাল কিনতে পারবেন।

জেলা শহরের পশ্চিম শিংপাড়া মহল্লার দেবারু মোহাম্মদের স্ত্রী হাসিনা বলেন, ‘তখনো সূর্য ওঠেনি। কম দামে চাল কেনার জন্য ফজরের আজানের আগেই বাসা থেকে বের হয়েছি। রাস্তায় কুকুরের ভয়ে আসতে পারছিলাম না। এখন সকাল ১০টা বাজে, লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এরপরও চাল পাবো কি না জানি না।’
ব্যারিস্টার বাজার এলাকার আব্দুর রহমানের স্ত্রী জফিরন বলেন, ‘আমি রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করি। বৃষ্টি হলে কাজে যেতে পারি না। বৃষ্টির দিন কাজ বন্ধ থাকে। আর যেদিন কাজ পাই না সেদিন খাবারও জোটে না। এরআগে চার দিন এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে চাল না পেয়ে ফিরে গেছি। লাইনে দাঁড়িয়েও সবাই চাল পান না।’

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বিক্রয় কর্মসূচি চালু থাকবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যপণ্য সুলভ মূল্যে বিক্রি করা হবে। তবে চাহিদা বেশি থাকায় বরাদ্দ আরও বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হবে।
সফিকুল আলম/এসআর/জেআইএম