সাগর মোহনায় ডুবোচর, হুমকিতে ইলিশের প্রজনন

আব্দুস সালাম আরিফ আব্দুস সালাম আরিফ , জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী
প্রকাশিত: ১০:০৪ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২২

সাগর মোহনায় ডুবোচর জেগে ওঠায় হুমকির মুখে পড়েছে ইলিশের প্রজননসহ দেশের মৎস্য উৎপাদন। এতে সাগরে মাছের প্রাচুর্য থাকলেও নদ-নদীতে কাঙ্ক্ষিত মাছ পাচ্ছেন না জেলেরা। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ করা জরুরি বলে মনে করছেন মৎস্যখাতের গবেষকরা।

সরকারের নানামুখী উদ্যোগে দেশে মাছের উৎপাদন বাড়ছে। এতে সাগরে প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়ছে ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ। তবে সাগর মোহনায় জেগে ওঠা ডুবোচরের কারণে নদ-নদীতে পর্যাপ্ত মাছ ধরা পড়েছে না বলে জানিয়েছেন জেলেরা।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চর মন্তাজ গ্রামের জেলে ইসমাইল মৃধা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে আশপাশের নদীতে জাল ফালাইলেই মাছ পাইতাম। এখন সবখানে খালি চর আর চর। অনেক জায়গায় আছে জালই ডোবে না। কি করমু, বাধ্য হইয়া সাগরের দিগে যাইলা জাল ফেলতে হয়। যেই টাহার তেল পুইরা সাগরে যাওয়া লাগে হেই টাহার মাছই পাই না।’

৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে ইলিশের প্রজনন মৌসুম। এ সময় ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে নদীতে ছুটে আসে। তবে সাগর মোহনায় ডুবোচরের কারণে ইলিশের চলাচল ও ডিম ছাড়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করেন মৎস্যখাতের গবেষকরা।



পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. লোকমান আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাগর মোহনার ডুবোচরের বিষয় নিয়ে আমারও ভাবছি। ইলিশ যখন মাইগ্রেড করে সাগর থেকে নদীতে আসে তখন তাদের একটি নির্দিষ্ট গভীরতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সাগর থেকে নদীতে ঢুকতে মোহনায় যখন পর্যাপ্ত গভীরতা পায় না তখন তারা নদীতে আসতে পারে না। এটা থেকে উত্তোরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে ড্রেজিং করা। তবে আমাদের দেশে এখনো সাগর মোহনা কিংবা উপকূলগুলো ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা চালু হয়নি।’

তিনি বলেন, কোথায় কোথায় ডুবোচর আছে সেগুলো আগে চিহ্নিত করতে হবে। ইলিশের মাইগ্রেডের রুটগুলোকে চিহ্নিত করে তার গভীরতা বাড়াতে পারলে নদ-নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের পরিমাণ বাড়বে।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সাগর মোহনায় ডুবোচরের বিষয়ে আমরা জেলেদের সঙ্গে একমত। ইলিশ মাছ গভীর পানিতে চলাচল করে। ডুবোচরের কারণে তাদের চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে এরই মধ্যে বিষয়টি অবহিত করেছি। কীভাবে ইলিশের চলাচল নির্বিঘ্ন করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

মৎস্য অধিপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘পলির কারণে সাগর এবং নদী যেখোনে মিলিত হয়েছে সেসব স্থানে ডুবোচর জেগে উঠেছে। আমারও বিষয়টি অবগত হয়েছি। হয়তো ডুবোচর না থাকলে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়তো। এরপরও বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করবো। এখনো হয়তো আমরা ডুবোচরের কারণে কোনো প্রভাব দেখছি না। তারপরও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি।’

বিগত বছরগুলোর রেকর্ড ভেঙ্গে এবার উপকূলীয় জেলেদের জালে সবচেয়ে বেশি মাছ শিকারের আশা করছে মৎস্য বিভাগ। গতবছর জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পটুয়াখালী জেলায় ১১৮৮৮.৬৫ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়ে। এ বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৩ হাজার ৭ মেট্রিক টন ইলিশ শিকার হয়েছে। তবে সেই অনুপাতে নদ-নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ শিকার করতে পারেননি জেলেরা।

এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।