নতুন সাজে যশোরের কালেক্টরেট ভবন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ০৯:৩০ এএম, ২৩ নভেম্বর ২০২২
বিভিন্ন জাতের ফুলে সেজেছে কালেক্টরেট ভবনের সামনের অংশ

সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যের জেলা যশোর। ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা, মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা এবং প্রথম ডিজিটাল জেলা। প্রাচীনতম এ জনপদের বেশকিছু ঐতিহ্যের স্মারককে নতুনভাবে সামনে এনেছে যশোরের জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খানের উদ্যোগে অনন্য পুরাকীর্তির কালেক্টরেট ভবন পেয়েছে নতুন প্রাণ। সেখানে যুক্ত হয়েছে ইতিহাসখ্যাত যশোর রোডের টেরাকোটা। ৭৫ বছর পর প্রাণ পেয়েছে বি. সরকার ঘূর্ণায়মান মঞ্চ। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বিমূর্ত ‘সনেট’ ও ‘অমিত্রাক্ষর’ ফিরেছে মূর্ত হয়ে।

ইতিহাস বলে, ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে যশোর রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। যশোর-খুলনা-বনগাঁ এবং কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরের অংশ বিশেষ যশোর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৭৪৭ খ্রিস্টাব্দের দিকে যশোর নাটোরের রানী ভবানীর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে যশোর একটি পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

jagonews24

২৪১ বছরের এ পুরোনো জেলায় প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা এসেছেন চলেও গেছেন। কিন্তু হাতেগোনা কিছু সংখ্যক জেলা প্রশাসক আজও যশোরবাসীর হৃদয়ে অমলিন হয়ে আছেন। তারা ব্যতিক্রম ও নান্দনিক উদ্যোগের মাধ্যমে যশোরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে নিয়েছেন। যশোরের বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খানও তেমনই একজন। যিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর রুটিন কাজের পাশাপাশি যশোরকে অনন্য উচ্চতায় নিতে নান্দনিক কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নতুনরূপে যশোর কালেক্টরেট ভবন সাজানো হয়েছে। বর্ণিল আর্কিটেকচারাল আলোকসজ্জায় রাতে মোহনীয় রূপ ধারণ করে যশোরের ঐতিহ্যের প্রতীক এ ভবনটি। ভবন চত্বরে পার্ক ফিরে পেয়েছে প্রাণ। সবুজের মাঝে ফুলে ফুলে সুশোভিত করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা যশোর। যশোর রোডের শরণার্থীদের দুর্দশা আর যুদ্ধবিভীষিকা দেখে ১৯৭১ সালে মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ লেখেন ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। সেই বিখ্যাত কবিতা কালেক্টরেট ভবনের প্রবেশদ্বারের দেওয়ালে ‘টেরোকোটায়’ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রবেশ পথ ধরে ভবনের দ্বিতীয়তলায় উঠলেই চোখে পড়বে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ আলোকচিত্রে সাজানো হয়েছে কর্নারটি। যেখানে যশোরে বঙ্গবন্ধুর অবস্থানকালীন আলোকচিত্র আছে।

jagonews24

ভবনের দ্বিতীয় তলায় সেবা নিতে আসা মানুষের বসার কক্ষ (অপেক্ষা কক্ষ) সাজানো হয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়ায়। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসেই বই, পত্রিকা ও ম্যাগাজিন পড়ার ব্যবস্থা আছে।

কালেক্টরেট ভবনের দ্বিতীয়তলায় দাঁড়িয়ে সামনে তাকালে চোখে পড়বে অপরূপ কালেক্টরেট পুকুরটি। সংস্কার করায় বদলে গেছে চেহারা। পুকুরপাড় বাঁধাই ও বসার ব্যবস্থা করায় শহরবাসীর পছন্দের জায়গায় পরিণত হয়েছে এটি। পুকুরে বাহারি পদ্মফুলের চারা রোপণ করা হয়েছে। ছাড়া হয়েছে রঙিন মাছ।

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন স্কুল থেকে বাছাই করা ৫০ জন শিক্ষার্থীর লেখা কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প ও আঁকা ছবি দিয়ে জেলা প্রশাসন যশোরে উদ্যোগে প্রকাশ হয়েছে ‘খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে বই। শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শিক্ষার জন্য ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব চালু হয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য ছয় মাসব্যাপী আর্ট ক্যাম্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেখান থেকে শিখে তারা বিভিন্ন রকমের ভাস্কর্য, মুখোশ ইত্যাদি তৈরি করেছে। সেগুলোর প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও করা হয়।

যশোরের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ‘বি. সরকার ঘূর্ণয়মান রঙ্গমঞ্চ’ ৭৫ বছর পর স্বরূপে ফিরেছে। প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই মঞ্চ সংস্কার করা হয়েছে।

যশোরের মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস গবেষক সাংবাদিক সাজেদ রহমান বলেন, বর্তমান জেলা প্রশাসক দায়িত্ব গ্রহণের পর ব্যতিক্রমী কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ঐতিহ্য ও শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশে গৃহীত তার নন্দিত উদ্যোগ সমাদৃত হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী বি. সরকার ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চ সংস্কার ও নাম পরিবর্তন করে স্বরূপে ফিরিয়েছেন। ঐতিহ্যবাহী কালেক্টরেট ভবনে টেরোকোটায় ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ কবিতা, বঙ্গবন্ধু কর্নার ইত্যাদি চালু করেছেন।

jagonews24

যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল বলেন, কালেক্টরেট ভবনের বর্ণিল সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জায় বদলে গেছে দৃশ্যপট। কালেক্টরেট পার্ক ও পুকুর নগরবাসীর পছন্দের জায়গায় পরিণত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘সনেট’ ও ‘অমিত্রাক্ষর’ নামে কালেক্টরেট ভবনের দুটি মিলনায়তনের নামকরণ করেছেন। তিনি নান্দনিক কাজের মধ্য দিয়ে নান্দনিক জেলা প্রশাসক হিসেবে মানুষের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যশোরের সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, বর্তমান জেলা প্রশাসক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কালেক্টরেট ভবনে সন্নিবেশিত করেছেন। ভবনটিও সংস্কার ও আলোকসজ্জা করেছেন। বি. সরকার ঘূর্ণায়মান মঞ্চটি সংস্কার করে চালু করেছেন।

জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, যশোরের কালেক্টরেট এ জেলার একটি প্রতীক। এ প্রতীককে মানুষের মধ্যে আরও দৃষ্টিনন্দনভাবে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি। যশোরের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়ে এসব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে।

মিলন রহমান/এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।