সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলন চান ভাষা সৈনিক গণি


প্রকাশিত: ১২:৫৩ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মহান ভাষা আন্দোলনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার যে সকল ভাষা সৈনিক অংশ নিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম অ্যাড. ওসমান গণি। কিন্তু প্রচার বিমুখ এই মানুষটির মূল্যায়ন জেলার মানুষ তেমনভাবে দেখাননি। তাতেও তার কোনো আক্ষেপ নেই। তিনি চান দেশের সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলন হোক।

পূর্ব বাংলার ভাষার দাবি প্রত্যাখান করে উর্দু হবে রাষ্ট্রভাষা বলে ঘোষণা করা হলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ছাত্র-ছাত্রীরা এবং সংগ্রাম কমিটির ডাকে ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট, ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সকল স্কুল-কলেজে ধর্মঘট এবং ২১ শে ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। শুধু ছাত্র নয় সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটিও গঠন করা হয়। তখন ক্ষুব্ধ হয়ে তৎকালীন প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। কেউ বলে আইন ভঙ করতে হবে, কেউ বলে আইন ভঙ করা যাবেন। এই নিয়ে দুইটি পক্ষ হয়ে যায়।

ভাষা সৈনিক ওসমান গণির জন্ম ১৯৩০ সালের ৩১ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়পুরে গ্রামে। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে শহরের ইসলামপুর মহল­ায় বসবাস করছেন। তার পিতার নাম মরহুম আইউব আলী এবং মাতার নাম মরহুমা হাজেরা খাতুন। তার স্বপ্ন ও ইচ্ছার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন, শোষণহীন ও অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ দেখতে চান তিনি। পূর্ণ সোনার বাংলা গড়ে উঠুক এবং দেশের সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার গড়ে উঠুক এটিই তার শেষ ইচ্ছা।

ভাষা সৈনিক অ্যাড. ওসমান গণি জানান, ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের ছাত্র ছিলেন। তিনি বলেন, ছাত্র কেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সকল আন্দোলনের সূতিকাগার। ১৯৫০ সালে আব্দুল মতিন সাহেবকে আহ্বায়ক করে ‘ভাষা সংগ্রাম’ কমিটি গঠন করা হয়। দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার জন্য নেতা ও সদস্যদের জেলা ভাগ করে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়। আর তার দায়িত্ব পড়ে রাজশাহী ও বগুড়া জেলা।

ভাষা সৈনিক অ্যাড. ওসমান গণি জানান, প্রথমে রাজশাহী সরকারি কলেজে এসে লক্ষ্য করেন, তার আসার আগেই সেখানে ছাত্ররা সংগ্রামকে উজ্জীবিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। এরই প্রেক্ষিতে তৎকালীন নবাবগঞ্জ মহকুমার শিবগঞ্জ উপজেলার আদিনা ফজলুল হক কলেজে এসে ছাত্রদের নিয়ে সভা করেন তিনি এবং আন্দোলন সম্পর্কে সচেতন করেন। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পান তিনি। কিন্তু কয়েকজন শিক্ষক ও কলেজের কমিটির কিছু লোক বাংলা হিন্দুদের ভাষা, উর্দু মুসলমানদের ভাষা উল্লেখ করে এর বিরোধিতা করেন। পরে সেখান থেকে বগুড়ায় গিয়ে একটি কলেজে সভা করেন তিনি। সেখানেও ব্যাপক সাড়া পান এবং ঢাকায় ফিরে গিয়ে কমিটিতে রিপোর্ট প্রদান করেন।

তিনি আরো জানান, আমতলায় ছাত্রদের নিয়ে সভা হয়, সভায় ছাত্ররা আইন ভঙ করার পক্ষে মত প্রকাশ করে। এরপর গুলিবর্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবুল বরকতসহ অনেকেই গুলিবদ্ধ হন। অনেক ঘটনা ঘটে তা সবার জানা। ২১ শের সংগ্রাম কমিটির নেতা ও সদস্যদের, হল কমিটির নেতাদের ধড়পাকড় ও হয়রানি করা হয়। এসময় তিনি কালী মন্দিরে আত্মগোপনে থেকে রাজশাহীতে চলে আসেন।

সেখানেও পুলিশ তাকে ধরার চেষ্টা করলে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আদিনায় চলে আসেন। পরে নিজ বাড়ি নারায়নপুরে এবং শেষে গ্রেফতার এড়াতে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আত্মগোপন করেন। শেষে হুলিয়া উঠানো হয় এবং উর্দুর সঙ্গে বাংলাও অন্যতম ভাষা হিসেবে মর্যাদা পায়।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান এবং অধ্যায়নে মনযোগ দিয়ে ১৯৫২ সালে বিএ পাস, ১৯৫৪ তে এমএ পাস ও ১৯৫৬ সালে ‘ল’ পাস করেন। বর্তমানে তিনি আইন পেশায় রয়েছেন।

মোহা. আব্দুল­াহ/এআরএ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।