পর্যটক বেড়েছে কক্সবাজারে, উৎফুল্ল ব্যবসায়ীরা

সায়ীদ আলমগীর
সায়ীদ আলমগীর সায়ীদ আলমগীর কক্সবাজার থেকে
প্রকাশিত: ০৬:৩১ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২

খরা কাটিয়ে কক্সবাজারে বেড়েছে পর্যটক সমাগম। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) থেকে শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাত পর্যন্ত আবাসন, খাবারসহ সেবাধর্মী পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় বিকিকিনি হয়েছে সন্তোষজনক। এতে উৎফুল্ল পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

বড়দিনসহ টানা তিন দিনের ছুটিতে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে পর্যটননগরী কক্সবাজার। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে সকাল থেকে পর্যটকরা ভিড় করেন। ভিড় ছিল হোটেল-মোটেলের অলিগলিতেও। পর্যটকবাহী সাধারণ পরিবহন ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাস টার্মিনাল বাইপাস সড়ক, কলাতলী ডলফিন মোড়, হোটেল-মোটেল জোন, লাবণী, শৈবাল সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা দুর্যোগের পর চালু হওয়া পর্যটন ব্যবসা গত মৌসুম থেকেই মন্দা যাচ্ছে। চলতি বছর স্মরণকালের সবচেয়ে বাজে সময় কাটছে পর্যটনে। এবার পর্যটন মৌসুম শুরুর পর পরই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে নাব্য সংকটের দোহাই দিয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে দুটি জাহাজ চলাচল করলেও তার ব্যয়ভার সাধারণের নাগালের বাইরে। ফলে, কক্সবাজার বেড়াতে এসে যারা সেন্টমার্টিনকে ভ্রমণ তালিকায় রাখেন তাদের অনেকে কক্সবাজার বেড়ানো স্থগিত রাখছেন।

এরপরও বড়দিনসহ সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে তিন দিন বন্ধ পেয়ে অনেকে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছেন। কিছুটা ছাড় পেয়ে অনেক পর্যটক কক্সবাজার থেকেই সেন্টমার্টিন দ্বীপ দেখতে গেছেন। তবে, এদের অনেকের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তাদের মতে, জাহাজেই সময় চলে গেছে সিংহভাগ। মাত্র ঘণ্টাখানেকের মতো সময় দ্বীপে অবস্থানের সুযোগ পেয়েছেন তারা।

ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার মোস্তফা জানান, গতবছরের বিজয় দিবস ও চলতি বছরে ভাষা দিবস ঘিরে টানা ছুটিতে কিছুটা পর্যটক এসেছিলেন। কিন্তু এরপর বর্ষা, ঘূর্ণিঝড়সহ সবমিলিয়ে আবারও ভাটা পড়ে পর্যটনে। ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপন দিয়ে চলতি পর্যটন মৌসুম শুরু হলেও কক্সবাজারে আশানুরূপ পর্যটক উপস্থিতি নেই।

তিনি বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি-উখিয়া-টেকনাফে মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে সাম্প্রতিক সংঘাত ও নাফনদীতে নাব্য সংকটে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। স্বল্প ব্যয় ও সহজপথে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ বন্ধ থাকায় কক্সবাজারে মধ্য ও নিম্নবিত্ত পর্যটক উপস্থিতি নেই বললে চলে। ফলে, গেস্ট হাউজ, কটেজ ও ননস্টার হোটেলগুলো ফাঁকাই যাচ্ছে মৌসুমের এ সময়ে। এবার বিজয় দিবসের ছুটি সাপ্তাহিক বন্ধের দিন পড়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক উপস্থিতি হননি। এতে চরম হতাশায় সময় কেটেছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।

তবে হতাশায় আলো দেখিয়েছে বড়দিনের ছুটি বলে জানান টুয়াক সভাপতি আনোয়ার মোস্তফা। তিনি বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে বড়দিনের ছুটি এক হওয়ায় টানা তিন দিনের ছুটির সুযোগকে কাজে লাগাতে ভ্রমণপ্রেমীরা কক্সবাজার এসেছেন। আগাম বুকিং হয়েছে হোটেল-মোটেল ও কটেজ। ব্যয়বহুল জেনেও অনেকে আগাম টিকিট কেটেছেন কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে চলা কর্ণফুলী ও বার আউলিয়া জাহাজে। ফলে সেন্টমার্টিনেও এবার আগাম কিছু বুকিং পেয়েছেন সেখানকার হোটেল ব্যবসায়ীরা।

তারকা হোটেল হোয়াইট অর্কিডের জিএম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, অতীতে পুরো ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে প্রতিদিনই কমবেশি পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করতেন। তবে এবছরের চিত্র ভিন্ন। এরপরও বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলে টানা তিন দিনের ছুটিতে শুক্র ও শনিবার কক্সবাজারে গড়ে এক লাখ পর্যটকের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু রোববার (২৫ ডিসেম্বর) তা কমে এসেছে। যারা সোমবার অফিস করবেন তাদের অনেকে আজ ফিরে গেছেন। তাই আজকের উপস্থিতি অর্ধলাখে এসে থামবে।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, টানা বন্ধে আমাদের আশা ছিল কক্সবাজারে ৪-৫ লাখ পর্যটক আসবেন। কিন্তু তা হয়নি। এরপরও আমরা আনন্দিত।

কক্সবাজার জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, সমিতির তালিকাভুক্ত শতাধিকসহ কক্সবাজার পর্যটন জোনে চার শতাধিক রেস্তোরাঁ রয়েছে। পর্যটক শূন্যতায় সবাই দুর্বিষহ দিন কাটিয়েছি। তবে গত তিন দিন সবাই কমবেশি ব্যবসা করেছে। ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’ এ প্রবাদের মতোই আমরা খুশি।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সৈকত ও আশপাশে পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ছাড়াই আমরা তিন দিনের টানা ছুটি শেষ করতে পেরেছি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, পর্যটননগরী হিসেবে কক্সবাজারে আসা সবাইকে নিরাপদ রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা সেভাবেই পর্যটক নিরাপত্তায় সবসময় সর্তকাবস্থায় রয়েছি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পর্যটক হয়রানি রোধে আমরা সবসময় সজাগ রয়েছি।

এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।