কলেজের এক বাসেই ২৭ বছর পার

ঐতিহ্যবাহী ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজ শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ২৭ বছরের পুরোনো বাস। জেলার অন্যতম এই বিদ্যাপিঠে সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র একটি বাস। যেখানে ছাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী অন্তত চারটি বাসের প্রয়োজন। দীর্ঘদিন ধরে বাসের দাবি জানানো হলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ‘শিক্ষা, সাম্য, মৈত্রী’ স্লোগান নিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিজ নামে ফেনী শহরের রাজাঝির দীঘির পূর্ব পাড়ে পাবলিক লাইব্রেরির দোতলায় মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২ একর ৪৫ শতাংশ ভূমির উপর তা স্থানান্তর করা হয়। ১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয়করণের ঘোষণা দেন। ১৯৮৭ সালে কলেজটি সরকারি হয়।
‘মাত্র আটজন নিয়ে যাত্রা শুরু হওয়া এ কলেজে বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক এবং তিনটি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও দুটি বিষয়ে স্নাতকোত্তরসহ বিভিন্ন কোর্সে সাড়ে তিন হাজার ছাত্রী রয়েছে। এর মধ্যে ১২০ জনের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। বাকিরা শহর কিংবা গ্রামের বাড়ি থেকেই যাতায়াত করেন। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৫২ আসনের একটি বাস উপহার দেন। বাসটি সকাল ৮টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিসিক রাস্তার মাথা থেকে শুরু হয়ে শহর ও শহরতলীর ২৭টি স্পটের ফেনী সদর হাসপাতাল মোড় আর লালপোল পর্যন্ত চলাচল করে। প্রতিদিন সকালে ছাত্রীদের এনে আবার বিকালে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দেয় ‘
শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বাড়ি থেকে কলেজ যাওয়া-আসা করে। জেলার অপর পাঁচ উপজেলা সদরের দূরত্ব ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার। কলেজের বাস সার্ভিস না থাকায় প্রতি শিক্ষার্থীর দৈনিক যাতায়াতে অন্তত ১০০ টাকা খরচ হয়।
আরেকটি সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল ‘কলেজের পিঠা উৎসব ও কমিশনার জয়নাল আবদীন গ্রন্থাগারের’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওই অনুষ্ঠানে তিনি কলেজের জন্য আরেকটি বাস দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
কলেজের পরিবহন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান কামাল হোসেন মজুমদার বলেন, শিক্ষার্থীদের থেকে পরিবহন বাবদ যে টাকা নেওয়া হয় সেটা দিয়ে গাড়ি কেনা সম্ভব নয়। ছাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী অন্তত চারটি বাসের প্রয়োজন। যে বাসটি রয়েছে সেটি অনেক পুরোনো। একবার নষ্ট হলে মেরামত করতেও অনেক টাকা ব্যয় হয়।
কলেজ বাসেরচালক আবুল কাশেম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাসটি সড়কে চলাচল করায় মাঝে মধ্যে বিকল হয়ে যায়। কলেজ প্রশাসনের মাধ্যমে যন্ত্রাংশ মেরামত করায় তা এখনো ব্যবহারের উপযোগী রয়েছে।
ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুন নাহার বলেন, একটি বাস দিয়ে শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে গাদাগাদি করে আসা-যাওয়া করতে হয়। এ ব্যাপারে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর সহযোগিতায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করা হবে।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/জেএস/এমএস