‘বন্দুকযুদ্ধে’ ছাত্রদলকর্মী নিহত

সাড়ে ৪ বছর পর ওসির বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০৮:১০ পিএম, ০৫ জানুয়ারি ২০২৩

নেত্রকোনায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে ছাত্রদল কর্মী আমজাদ হোসেনকে (২৭) হত্যার সাড়ে চার বছর পর নেত্রকোনা মডেল থানার সাবেক ওসি বোরহান উদ্দিন খান ও এসআই মো. মামুনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে নিহতের বড় ভাই দেলোয়ার হোসাইন (৪০) বাদী হয়ে নেত্রকোনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদনটি করেন। আবেদনে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

ওসি বোরহান উদ্দিন খান বর্তমানে কেন্দুয়া সার্কেল কার্যালয়ে পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। মামুন খুলনা রেঞ্জে এসআই হিসেবে কর্মরত।

নিহত আমজাদ হোসেন নেত্রকোনা শহরের হোসেনপুর এলাকার মৃত আলী হোসাইনের ছেলে।

মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ২১ মে রাত ৩টার দিকে নেত্রকোনা মডেল থানার তখনকার ওসি বোরহান উদ্দিন খান ও এসআই মামুনের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্য ছাত্রদল কর্মী আমজাদ হোসেনের বাসা ঘেরাও করেন। পরে আমজাদের বড় ভাই মনির হোসাইনকে হাতকড়া পরানো হয়। এরপর আমজাদকে ডেকে তুলে হাতকড়া পরানো হয়।

এসময় আমজাদ তার স্ত্রীর ওড়না পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। এ অবস্থায়ই পুলিশ সদস্যরা দুই ভাইকে বেধড়ক মারধর করে গাড়িতে তুলে ১০ মিনিটের মতো মহল্লায় ঘোরাতে থাকেন। পরে মনির হোসাইকে ছেড়ে দিয়ে আমজাদকে চোখ বেঁধে নিয়ে যান। ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে সদর উপজেলার মেদনি ইউনিয়নের বড়ওয়ারি সেতু এলাকায় পুলিশ মাদক উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে আমজাদ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে।

নিহতের ভাই দেলোয়ার হোসাইন বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রেস ক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে আবেদনের ফটোকপি দেন। এসময় তার আইনজীবী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফা জেসমিন, ঢাকা বারের আইনজীবী নুরুল ইসলাম, সাইফুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

‘বন্দুকযুদ্ধে’ ছাত্রদলকর্মী নিহত, সাড়ে ৪ বছর পর ওসির বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘আমার ছোট ভাই আমজাদকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে মাদক ব্যবসার অভিযোগ এনে অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ সদস্য গুলি করে হত্যা করেছে। মামলার উল্লেখিত আসামিরা তখন নেত্রকোনা সদর থানায় কর্মরত থাকায় আশু বিপদের আশঙ্কায় মামলা করতে সাহস পাইনি। এখন তারা ওই থানায় কর্মরত না থাকায় আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে আদালতে মামলার আবেদন করেছি। আশা করি আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।’

এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী আরিফা জেসমিন মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আবেদনে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৫(২) ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। আদালতে এ নিয়ে শুনানিও হয়েছে। শেষে বিচারক বলেছেন আদেশটি পরে দেবো।’

জানতে চাইলে পরিদর্শক বোরহান উদ্দিন খান বলেন, ‘খুন, অস্ত্র, বিস্ফোরক, দ্রুতবিচার, চুরি, মাদকসহ ১৩টি মামলার আসামি ছিলেন আমজাদ। মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৫০০ গ্রাম হেরোইন, ৩০৫ পিস ইয়াবা, দুটি কার্তুজ ও একটি পাইপগান উদ্ধার করা হয়েছিল। এসময় তিনি পুলিশের ওপর হামলা চালান। পরে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পালটা গুলি চালালে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।’

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক বলেন, আমজাদ ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সবশেষ বিএনপির রাজনৈতিক মামলায় তিনি আমার সঙ্গে আসামির তালিকায় ছিলেন। যদি তিনি আসামি হন বা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকেন তাহলে তাকে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার করা যেতো।

এইচ এম কামাল/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।