জ্ঞান চর্চার ঘরে ৬ মাস ধরে ঘুটঘুটে অন্ধকার!

নাসিম উদ্দিন নাসিম উদ্দিন , জেলা প্রতিনিধি, জামালপুর জামালপুর
প্রকাশিত: ০৯:৪১ এএম, ০৮ জানুয়ারি ২০২৩
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লাইব্রেরির চেয়ার টেবিল

একসময় সাহিত্য চর্চার কেন্দ্রবিন্দু ছিল জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরি। পাঠকের আনাগোনায় মুখরিত থাকতো লাইব্রেরি প্রাঙ্গণ। প্রতিদিন রাত ৯টা পর্যন্ত ভিড় জমতো পাঠকের। অথচ প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ছয় মাস ধরে বন্ধ। এতে নষ্ট হচ্ছে ১৮ হাজার মূল্যবান বই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশি-বিদেশি বইয়ের ভান্ডারখ্যাত ঐতিহ্যবাহী এ লাইব্রেরিটি ১৯৫৯ সালে পৌরসভার একটি কক্ষে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে পৌর শহরের বকুলতলা মোড়ে ২৯ শতাংশ জমিতে নতুন আঙ্গিকে লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকেই লাইব্রেরিটি শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রাণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

পাঠকের কথা মাথায় রেখে সরকারি-বেসরকারি অনুদানে প্রায় ১৮ হাজার বই কেনা হয়। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন লাইব্রেরিয়ান ও একজন পিয়ন নিয়োগ দেওয়া হয়। সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও হল রুম ভাড়ার টাকায় চলতো তাদের বেতন। বর্তমানে সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও হল রুম ভাড়া না হওয়ায় তাদের বেতন বকেয়া পড়েছে দীর্ঘদিনের। এ কারণে তারাও দায়িত্ব পালন করছেন না এখন। লাইব্রেরি পরিচালনার জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও তাদের কোনো কার্যক্রম নেই দীর্ঘদিন।

jagonews24

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লাইব্রেরির চারপাশ জরাজীর্ণ ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ। তালা ঝুলছে প্রধান ফটকে। ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ধুলাবালু, পোকা-মাকড়, মাকড়শায় ছেয়ে গেছে বই রাখার কক্ষটি। এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বই, চেয়ার টেবিল।

শারীরিক অসুস্থতা ও বেতন বকেয়ার কারণে লাইব্রেরি ছেড়েছেন লাইব্রেরিয়ান শ্যামল চন্দ্র দাস। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, একসময় লাইব্রেরিতে প্রচুর পাঠকের সমাগম হতো। জ্ঞান চর্চার এক অনন্য নজির ছিল এ প্রতিষ্ঠানটি। তবে বেতন বকেয়া ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে আর লাইব্রেরিতে যাই না। এখন কী অবস্থা সেটিও বলতে পারবো না।

একই অবস্থা লাইব্রেরির পিয়ন দুদু মিয়ার। আট বছরের বেতন বকেয়া তার। তাই দুঃখ করে জাগো নিউজকে বলেন, একসময় এ বেতনে আমার সংসার চলতো। দীর্ঘদিন ধরে বেতন পাই না। সাবেক মেয়র কিছুদিনের বেতন দিয়েছিলেন। এরপর আর বেতনের ব্যবস্থা হয়নি। তাই জীবন বাঁচানোর তাগিদে লাইব্রেরি ছেড়েছি।

কবি ও প্রাবন্ধিক জাকারিয়া জাহাঙ্গীর জাগো নিউজকে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে সাহিত্য-সংস্কৃতিকে উজ্জীবিত ও পাঠক তৈরিতে পাবলিক লাইব্রেরির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে পাবলিক লাইব্রেরির এখন করুণ দশা। বিষয়টি শিগগির প্রতিকার না করলে নতুন প্রজন্ম হয়তো ভুলেই যাবে যে, পাবলিক লাইব্রেরি বলতে কিছু ছিল।

jagonews24

কবি ও সাংবাদিক সাযযাদ আনসারী জাগো নিউজকে বলেন, সরকার জ্ঞান বৃদ্ধি ও আধুনিক সমাজ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অথচ জেলার লাইব্রেরি প্রায় বহু বছর থেকেই অচলাবস্থা। এক বছর আগে জেলা প্রশাসক একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছিলেন। এদেরও কোনো কার্যক্রম নাই। লাইব্রেরিভিত্তিক কার্যক্রম না হলে নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠতে পারে না। সুতরাং এ লাইব্রেরিকে সচল করা এবং আরও কার্যকর করে গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছি।

পাবলিক লাইব্রেরির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন জাগো নিউজকে বলেন, পাবলিক লাইব্রেরি জেলার প্রাচীন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি। আমি মেয়র থাকাকালে সচল রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক ও কমিটির অন্য সদস্যদের অসহযোগিতার কারণে পারিনি। নতুন প্রজন্মের জ্ঞান প্রসারের জন্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠান সচল রাখা খুবই জরুরি।

এ বিষয়ে পাবলিক লাইব্রেরি পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায় জাগো নিউজকে বলেন, লাইব্রেরিটি পরিদর্শনের পর সচল করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।