মদপান
অসুস্থ চা দোকানির মৃত্যু, লাইফ সাপোর্টে প্যানেল মেয়র
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলায় দাওয়াত খাওয়া শেষে মদপানে অসুস্থ চা দোকানি লিটন মিয়াও (৪০) মারা গেছেন।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। লিটন মিয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা।
কুলিয়ারচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মিলন রায় বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, লিটন মিয়াকে হাসপাতালে আমরা মৃত অবস্থায় পাই।
আরও পড়ুন: কিশোরগঞ্জে মদপানে আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪ জনের মৃত্যু
মদপানে এ নিয়ে দুই আওয়ামী লীগ নেতাসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য চারজন হলেন কুলিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক-১ গিয়াস উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক-২ জহির রায়হান জজ মিয়া, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক গোবিন্দ দাস ও রিকশাচালক শাহজাহান।
এছাড়া কুলিয়ারচর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান ঢাকার একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে।
এদিকে মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে কুলিয়ারচর বরখারচর ঈদগা মাঠে গিয়াসউদ্দিন ও জহির রায়হান জজের জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। অপরদিকে গোবিন্দ দাসের শেষকৃত্যও শেষ করা হয়েছে। চা দোকানি লিটনের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর দাফন করা হবে।
আরও পড়ুন: পুলিশের তাড়া খেয়ে দৌড়াতে গিয়ে তরুণের মৃত্যুর অভিযোগ
স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে কুলিয়ারচর বাজারে একটি অফিসে দাওয়াত খাওয়া শেষে সবাই একসঙ্গে মদপান করেন। পরদিন শনিবার তাদের সঙ্গে থাকা বাজিতপুর সরারচর এলাকার রিকশাচালক শাহজাহান অসুস্থ হয়ে মারা যান।
সোমবার ভোরে বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুলিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক-১ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস, সাংগঠনিক সম্পাদক-২ জহির রায়হান জজ মিয়া এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে স্থানীয় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক গোবিন্দ দাস মারা যান।
ওইদিন সন্ধ্যায় মারা যান আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনের চা দোকানি লিটন মিয়া (৪০)। কুলিয়ারচর পৌরসভার প্যানেল মেয়র হাবিবুর রহমান ঢাকার একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে।
কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জাগো নিউজকে বলেন, দুদিনের ব্যবধানে ঘনিষ্ঠ পরিচয় থাকা পাঁচজনের মৃত্যুকে সহজভাবে দেখছে না পুলিশ। এজন্য তাদের মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়। তবে প্রথম দিনে মারা যাওয়া শাহজাহানের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। তার ময়নাতদন্ত করা হয়নি।
আরও পড়ুন: কুলিয়ারচরে কবর থেকে কঙ্কাল চুরির চেষ্টা
ওসি আরও বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত সব দিক নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শনিবার রাতে তারা কোথায় ছিলেন এবং কী করেছেন, সেটি জানার চেষ্টায় চলছে।
কুলিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমতিয়াজ বিন মুছা জিসান জাগো নিউজকে বলেন, ১৯৭৫ সালের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন গিয়াসউদ্দিন ও জহির রায়হান জজ মিয়া। দলে তাদের অবদান ছিল অনেক। তাদের মৃত্যুর খবরে আওয়ামী লীগের নেতারা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। আমি শোকাহত মর্মাহত। কী কারণে, কীভাবে এ ঘটনা ঘটলো তা নিজেও হতাশ হয়েছি। এভাবে তাদের মৃত্যু হবে কেউ ভাবিনি।
কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াসির মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এমন মৃত্যু কারও কাম্য নয়। তারা দুজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। সেদিন তারা কি পান করেছিল এবং তরল পদার্থে বিষ ছিল কি-না তা তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মহসিন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, তাদের মৃত্যুতে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। তারা ছিল দলের কান্ডারী।
এলাকার ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কুলিয়ারচর এলাকায় এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। তারা মদপান করতো এ কথা কেউ জানতেন না। ঘটনাটি পীড়াদায়ক ও মর্মান্তিক।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের এ দুই নেতার জানাজায় অংশ নেন। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, গিয়াসউদ্দিন ও জহির রায়হান খুব ভালো নেতা ছিলেন। তারা আমার বাবার পরামর্শে রাজনীতি করতেন। এমনভাবে তাদের মৃত্যু হবে ভাবতেও পারিনি। ঘটনাটি দুঃখজনক।
রাজীবুল হাসান/এসজে/এমএস