প্রকল্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে গিয়ে মামলার হুমকি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বান্দরবান
প্রকাশিত: ০১:৩৮ পিএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

 

বান্দরবানে একটি প্রকল্প বন্ধের জন্য অভিযোগ দিতে গিয়ে মামলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রামদা খালের ওপর অহেতুক স্লুইস গেট ও খাল খনন প্রকল্পের বিরুদ্ধে স্থানীয় ৫০০ জনের সই নিয়ে অভিযোগপত্র দিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) যান স্থানীয় কয়েকজন। তবে তা গ্রহণ না করে উল্টো মামলা করার হুমকি দেন প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম মজুমদার।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বান্দরবানে পানি সমস্যা নিরসনে দুই কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে রামদা খালের ওপর স্লুইস গেট ও তিন হাজার ২০০ মিটার খাল খনন প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। তবে এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে স্থানীয় ৫০০ জনের সই নিয়ে একটি অভিযোগপত্র জমা দিতে যান ওই এলাকার জিয়াবুল হক, আবদুর ছবুর, মো. আবদুল জলিল ও মো. হাসান। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম মজুমদার অভিযোগ গ্রহণ না করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাইচতলি এলাকার রামদা খালের উপর যেখানে স্লুইস গেট স্থাপন করতে যাচ্ছে এলজিইডি, সেখানের পশ্চিম দিকে ৭০০ ফুট দূরত্ব থেকে চট্টগ্রাম সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউপির বড়দুয়ারা সীমানা এবং ৯০০ ফুট দূরত্ব থেকে সরকারের অধিগ্রহণ করা জায়গা। পূর্বে প্রায় এক হাজার ফুট দূর থেকে পাহাড়। দক্ষিণে খালের পাড়ে বসতঘর। সেগুলোও সরকারের অধিগ্রহণ করা জায়গা। এ এলাকার বান্দরবান সীমান্তে চাষযোগ্য জমি ১-২ একর ও চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউপির বড়দুয়ারা এলাকার ৩-৪ একর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে। সেগুলো ডিপ টিউবওয়েলের বা খালের পানি দিয়ে চাষ করা হয়। এ এলাকার ৯-১০ একর চাষাবাদযোগ্য জমির জন্য প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে স্লুইস গেট ও খাল খনন প্রকল্পের কোনো প্রয়োজন নেই। এছাড়া এ এলাকার প্রায় প্রতিটি ঘরে ডিপ টিউবওয়েল থাকায় পানির তেমন সমস্যাও নেই। ফলে এই প্রকল্পটি স্থানীয়দের তেমন কোনো উপকারে আসবে না। প্রকল্পটি সরকারি টাকা অপচয় ছাড়া কিছু নয়।

আরও পড়ুন: বান্দরবানে জঙ্গিদের সঙ্গে র্যাবের গুলিবিনিময় চলছে

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, এই এলাকায় চাষের জন্য খুব বেশি জমি নেই। শুধুমাত্র সরকারি টাকা লুটেপুটে খাওয়ার জন্যই এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে।

123.jpg

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কাইচতলি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১৫-১৮ ফুট প্রস্থের রামদা খলের উপর প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পরিমাপ করছেন এলজিইডি’র কর্মীরা। আশপাশে যে জমিগুলো রয়েছে তার মধ্যে বেশকিছুতে রয়েছে মুরগির খামার ও মাছের প্রজেক্ট।

সেখানে এলজিইডি’র কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ এলাকার ৩০০ হেক্টর (৭৪১.৩১৫ একর) জমির আবাদ, মৎস্য চাষ ও স্থানীয়দের পানি সংকট নিরসনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দুই কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে স্লুইস গেট ও রামদা খাল খনন প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন হলে স্থানীয়রা উপকৃত হবেন।

রামদা খাল সমবায় সমিতির সদস্য আমান উল্লাহ জানান, তাদের সুয়ালক কাইচতলি এলাকায় চাষাবাদের তেমন কোনো জমি নেই। খালের পশ্চিমে চট্টগ্রামের বাজালিয়া এলাকা। সেখানে কয়েক কানি চাষের জমি থাকলেও পূর্বপাশে কাইচতলি এলাকায় সড়ক ও পাহাড়ি এলাকা। এছাড়া প্রকল্পের বিষয়ে তেমন কিছু জানা নেই তার। স্লুইস গেট হলে এলাকার অপকার ছাড়া উপকার হবে না।

আরও পড়ুন: তমব্রু ক্যাম্পের ১৮৪ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারে স্থানান্তর

স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াবুল হক বলেন, প্রথমে শুনেছি ওই জায়গায় একটি ব্রিজ হবে। পরে রাবারড্যাম (স্লুইস গেট) হওয়ার কথা শুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় তাদের প্রাথমিকভাবে নিষেধ করা হয়। কিন্তু তারা তা না মানায় নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগপত্র নিয়ে গেলে তিনি বলেন, এ অভিযোগ দিয়ে কোনো লাভ নেই। এ প্রকল্পটি হবে এবং এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো।

কাইচতলি ইউপি সদস্য ও রামদা খাল সমবায় সমিতির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রামদা খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে খালটি সংকীর্ণ ও মৃত প্রায়। খালটি পুনরুদ্ধার করতে সমবায় সমিতি গঠন করে প্রকল্পের আবেদন করা হয়। খালের ওপর স্লুইস গেট স্থাপন ও খনন হলে এলাকার ২০০ একর জমি চাষাবাদে সহায়ক হবে।

এবিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম মজুমদার মামলার হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, সোমবার দুপুরে কাইচতলি এলাকার কয়েকজন একটি অভিযোগ নিয়ে আসলে তাদের অভিযোগটি ডাকে দিতে বলা হয়। সরকারি উন্নয়নমূলক কাজে বাধা দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। কেউ যদি এটার মিথ্যা ব্যাখ্যা করে, তাহলে কিছু করার নেই।

আরও পড়ুন: দুই ডিঙি নৌকার সংঘর্ষে প্রাণ গেলো মাঝির

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এ এলাকায় সমবায় সমিতি করা হয়েছে। সমিতির সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই বাছাই করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ থাকলে যাচাই বাছাই করার সময় অভিযোগ না করে কাজ শুরু করার সময় কেন অভিযোগ নিয়ে আসছে? আমার মনে হয়, উদ্দেশ্যমূলকভাবে উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত করতে তারা এ অভিযোগ করছেন।

নয়ন চক্রবর্তী/জেএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।