নিরাপত্তার অভাবে বরগুনায় কমেছে পর্যটক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
প্রকাশিত: ১১:০৮ এএম, ২০ মার্চ ২০২৩
ফাইল ছবি

বরগুনার তালতলী উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই। নিরাপত্তার অভাবে নারীদের উত্ত্যক্ত ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এমনকি সংঘবদ্ধ ধর্ষণও ঘটেছে একাধিক। ফলে দিন দিন পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ছে এখানকার জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যটন কেন্দ্রের জনপ্রিয়তা ধরে রাখা ও পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের বিকল্প নেই। দ্রুত ট্যুরিস্ট পুলিশের ক্যাম্প স্থাপন প্রয়োজন।

নিরাপত্তার অভাবে বরগুনায় কমেছে পর্যটক

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর সুন্দরবন খ্যাত টেংরাগিরি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এ বনের আয়তন ১৩ হাজার ৬৪৩ একর। এখানে ২০১০-২০১১ ও ২০১১- ২০১২ অর্থবছরে প্রায় দুই কোটি ৬৪ লাখ টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয় টেংরাগিরি ইকোপার্ক। যা ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। তখন থেকেই টেংরাগিরির শ্বাসমূলীয় বন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের কাছে।

ইকোপার্কে দেখা যায় মায়াবী হরিণ, কাঠবিড়ালি, কুমির, বানর, শুকর, সরীসৃপসহ নানা ধরনের বন্যপ্রাণী। এছাড়া আছে সুন্দরবনের হাজারও গাছ। বাহারি এসব গাছের মধ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা তিন কিলোমিটার পথ হাঁটলেই দেখা মিলবে সমুদ্র সৈকতের।

নিরাপত্তার অভাবে বরগুনায় কমেছে পর্যটক

শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত নামে আরও একটি পর্যটন স্পট আছে এখানে। এর এক পাশে বিশাল বঙ্গোপসাগর আর অন্য পাশে পায়রা, বলেশ্বর, বিষখালী নদীর মোহনা। এখানে বসে দেখা যায় সূর্যাস্ত।।

তালতলীর এসব পর্যটন স্পটের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাজার হাজার পর্যটক আসতো এখানে। কিন্তু পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার অভাবে চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হয়ে আসছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে টেংরাগিরি ইকো পার্কে দুলাভাইয়ের সঙ্গে ঘুরতে এসে এক তরুণী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় তরুণী চারজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।

নিরাপত্তার অভাবে বরগুনায় কমেছে পর্যটক

২০২০ সালের এপ্রিল মাসে তালতলীর শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে পটুয়াখালীর মহিপুর এলাকার এক নারী দর্শনার্থী ঘুরতে এসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় ওই নারী বাদী হয়ে পাঁচজনের নামে তালতলী থানায় মামলা করেন।

নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ টেংরাগিরি ইকো পার্কের কুমির প্রজনন কেন্দ্রে কুমিরের সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রাণ হারান আসাদুজ্জামান রনি নামের এ যুবক।

নিরাপত্তার অভাবে বরগুনায় কমেছে পর্যটক

সবশেষ গত বছরের ২৩ জুলাই শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে স্রোতে ভেসে দুজনের মৃত্যু হয়। তাদের উদ্ধার করার মতো কোনো ব্যবস্থা চিল না এখানে।

এসব কারণে পর্যটক কমতে শুরু করেছে। ২০১৯ সালে পর্যটনকেন্দ্র দুটিতে প্রায় দুই লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটেছিল। কিন্তু বর্তমানে পর্যটকের সংখ্যা কমেছে অনেক গুণ। করোনা স্বাভাবিক হলেও ২০২২ সালে পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র ২০-২২ হাজার।

নিরাপত্তার অভাবে বরগুনায় কমেছে পর্যটক

তালতলীর ছকিনা এলাকার রাকিব হাওলাদার বলেন, পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দিন দিন অপরাধের সংখ্যা বেড়েই চলছে। প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীদের টাকা পয়সা ছিনতাই হচ্ছে। এমনকি এসব এলাকায় বিগত দিনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে। এসব অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় আগের থেকে অনেক পর্যটক কমে গেছে। দ্রুত পর্যটন কেন্দ্রের নিরাপত্তার ব্যবস্থা জরুরি।

এদিকে তালতলীর পর্যটন কেন্দ্রে এখনো কিছু পর্যটক আসছেন। তবে তাদের ভেতরও সৌন্দর্য উপভোগের চেয়ে বেশি আতঙ্ক বিরাজ করে।

নিরাপত্তার অভাবে বরগুনায় কমেছে পর্যটক

বাকেরগঞ্জ থেকে ইকো পার্কে ঘুরতে আসা মো. শাকিল আহমেদ বলেন, ‘শুনেছি টেংরাগিরিতে সাগর ও সুন্দরবন একসঙ্গে দেখা যায়। তাই স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। এখানে অসম্ভব ভালো লেগেছে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দেখতে পেরেছি। বনের মধ্যে হরিণের ছোটাছুটি দেখেছি। তবে এখানে কোন প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। কেউ যদি আমাদের ওপর আক্রমণও করে কিছু করার থাকবে না।’

বরগুনা জেলা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি আরিফ রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পর্যটন কেন্দ্রের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ অত্যন্ত জরুরি। ট্যুরিস্ট পুলিশ যে শুধু পর্যটকদের নিরাপত্তা দেবে বিষয়টা এমন না। আমরা যারা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করি তাদেরও নিয়ন্ত্রণে ট্যুরিস্ট পুলিশ অত্যন্ত জরুরি।’

নিরাপত্তার অভাবে বরগুনায় কমেছে পর্যটক

আরিফ আরও বলেন, ‘হোটেল ভাড়া নিয়ন্ত্রণে রাখা। ট্যুরিস্টদের কাছে স্পিড বোট, ট্রলার বা নৌকা ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে কি-না, হোটেলে খাবারের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে কি-না এসব তদারকির জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ ছাড়া নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। তাই প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি তালতলীর টেংরাগিরি ইকোপার্কে যত দ্রুত সম্ভব একটি ট্যুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হোক।’

এ বিষয়ে বরগুনা পুলিশ সুপার মো. আবদুস ছালাম জাগো নিউজকে বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। শিগগির একটা ব্যবস্থা হবে। তবে ক্যাম্প স্থাপনের আগ পর্যন্ত পর্যটন কেন্দ্রে তালতলী থানার একটি টিম দিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।

এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।