বর্জ্যের বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে ইফতার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৫:০৮ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২৩

দেশের একমাত্র বদ্বীপ মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড জনবিচ্ছিন্ন সোনাদিয়া দ্বীপ। নাগরিক অধিকার বঞ্চিত দ্বীপবাসীর জন্য এক অভিনব সেবা চালু করেছে ‘মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) পৃষ্ঠপোষকতা ও উপকূলীয় বনবিভাগের সহযোগিতায় দ্বীপের বালিয়াড়ি ও বাসাবাড়ির অপচনশীল আবর্জনার বিনিময়ে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। রোজার একদিন আগে খেজুর, মুড়িসহ ব্যাগভর্তি অন্য সামগ্রী পেয়ে খুশি সোনাদিয়াবাসী।

প্রশাসন ও মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশনের এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ দ্বীপ ও বসতবাড়িকে আবর্জনামুক্ত করতে সহায়তা করবে, এমনটিই মন্তব্য কুতুবজোম ইউনিয়নের দ্বীপ এলাকার ইউপি সদস্য একরাম মিয়ার।

jagonews24

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে সোনাদিয়ার পশ্চিমপাড়া চর এলাকায় মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশনের আবর্জনা বিনিময় ও ইফতার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। রমজানজুড়ে এ কার্যক্রম অব্যাহত রেখে ঈদের আগে দ্বীপের সাড়ে তিনশ পরিবারের আড়াই হাজার মানুষের জন্য নতুন জামা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ব্যতিক্রমী এ কার্যক্রমের সমন্বয়ক এ কে এম হাসানুজ্জামান মৃদুল।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সহকারী ম্যানেজার আমজাদ হোসেন জানান, সোনাদিয়া একটি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় দ্বীপ। এখানে গড়ে তোলা হচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ কারণে দ্বীপকে পরিচ্ছন্ন রাখতে স্থানীয় অধিবাসীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবী ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপকূলীয় বনবিভাগ ও বেজার সহযোগিতায় এ উদ্যোগে রয়েছে ইফতার ও ঈদ সামগ্রী বিতরণ। দ্বীপবাসী বাড়িতে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্য ও অন্য আবর্জনা জমা দিলেই ইফতার ও ঈদ সামগ্রী পাবেন।

স্থানীয় সুলতান আহমদ বলেন, প্রায় ১২ কিলোমিটার ব্যাসের এ দ্বীপের পূর্বপাড়ায় একটি মাত্র প্রাইমারি স্কুল রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বা আর কোনো সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠান এখানে নেই। এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ার দূরত্ব প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার। তাই এখানকার শিশুরা শিক্ষাবিমুখ। হাঁটতে শিখলেই বাবা-দাদা বা বড় ভাইদের সঙ্গে মাছের পোনা ধরা বা অন্য কাজে তাদের মনোনিবেশ হয়।

তিনি বলেন, মহেশখালী-কক্সবাজারের সঙ্গে একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম নদীপথ। এ যোগাযোগ জোয়ার-ভাটায় নির্ভরশীল। নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত দ্বীপে রোজার আগে ইফতার উপহার পাওয়া, তাও আবার ময়লার বিনিময়ে, এটি সত্যিই অন্যরকম অনুভূতি। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে দ্বীপটি রক্ষা পেতে পারে। তবে প্রচারণার চেয়ে বিতরণ হওয়া ইফতার সামগ্রী যতসামান্য বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

jagonews24

উপকারভোগী সালেহা আকতার (৪৫) বলেন, প্লাস্টিক ও বাড়ির অপচনশীল ময়লা দিয়ে খেজুর ও মুড়িসহ আরও কিছু পণ্য পেয়েছি। আবর্জনা দিয়ে এসব পাওয়া যাবে কখনো ভাবিনি। এখন থেকে প্লাস্টিক ফেলে না দিয়ে সংরক্ষণ করবো। দ্বীপের চারপাশের বালিয়াড়িতে কোনো ময়লা পেলে তাও কুড়িয়ে জমিয়ে রাখবো।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনসহ অন্যান্য দ্বীপ এবং সৈকতকে দূষণমুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসন নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে পুরোপুরি সফলতা আসছে না। সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ শুরু করেছে। সেন্টমার্টিনে প্লাস্টিকের বিনিময়ে নিত্যপণ্য পাচ্ছে স্থানীয়রা আর সোনাদিয়ায় মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন দ্বীপবাসীকে ইফতার সামগ্রী দিয়েছে বলে জেনেছি। উদ্যোগগুলো অভিনব। আশা করছি এসব উদ্যোগের মাধ্যমে দ্বীপের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা হবে।

সায়ীদ আলমগীর/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।