ঈশ্বরদীতে রাতারাতি দ্বিগুণ সবজির দাম

রমজানকে ঘিরে পাবনার ঈশ্বরদীর বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। কিছু কিছু পণ্যের দাম রাতারাতি বেড়েছে। বিশেষ করে বেগুন, শসা, লেবু, টমেটো, কলা, পাকা পেঁপে, আনারস, বেলসহ দেশীয় ফলের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। পাশাপাশি আদা, পটোল, ঢ্যাঁড়স ও সজনে ডাটার দাম বেড়েছে। কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, মাছ, মাংস, ব্রয়লার মুরগি, ভোজ্যতেল, ডালসহ অন্যান্য পণ্যের দাম অপরিবর্তিত আছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সকালে ঈশ্বরদীর সবজি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পর্যাপ্ত পরিমাণ সবজির সরবরাহ আছে। তবু বিক্রেতারা অন্যদিনের তুলনায় সব সবজির দাম বেশি হাঁকছেন। ৩০ টাকার বেগুন ৬০-৭৫ টাকা, ২০ টাকা লেবুর হালি ৪০ টাকা, ২৫ টাকার শসা ৫০ টাকা, ২৫ টাকার টমেটো ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
দেশি ফল কলার হালিতে বেড়েছে ৫-৭ টাকা, ৩৫ টাকার বেল ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ৪০ টাকার পটোল ৬০ টাকা, ৬০ টাকার ঢ্যাঁড়স ৮০-৯০ টাকা, ১২০ টাকা সজনে ডাটা ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাত্র দুদিনের ব্যবধানে এ দাম বেড়েছে। রোজায় এসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে দাবি ক্রেতাদের।
উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের দুবলাচারা গ্রামের ঢ্যাঁড়স চাষি আহমেদ আলী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার মুলাডুলি পাইকারি আড়তে ৬০ কেজি দরে ঢ্যাঁড়স বিক্রি করেছি। শুনেছি খুচরা বাজারে ঢ্যাঁড়স ৮০-৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজিতে খুচরা বিক্রেতারা ২০-২৫ টাকা লাভ করছেন।’
তবে মুলাডুলি সবজি আড়তের আড়তদার আমিনুল ইসলাম বাবু বলেন, এ আড়তে কৃষকদের কাছ থেকে ৬০ টাকা কেজি ঢ্যাঁড়শ কেনা হচ্ছে। এসব ঢ্যাঁড়স স্থানীয় বাজারে খুব একটা বিক্রি হয় না। এগুলো ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে চলে যায়।
মানিকনগর গ্রামের লেবু চাষি মারুফ হাসান বলেন, বাগানের সবচেয়ে ভালো লেবু ১৮-২০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। রমজান উপলক্ষে আমরা দাম বাড়াইনি। লেবুর যারা পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতা তারা দাম বাড়াতে পারে।
ঈশ্বরদী বাজারের দেশীয় ফল ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন বলেন, ইফতারির আয়োজনে দেশীয় ফলের চাহিদা একটু বেশি থাকে। দু-তিন দিন হলো দেশীয় ফল বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রিও বেশি দামে করছি। বেল, কলা, লেবু, মেওয়া, পেয়ারাসহ প্রতিটি ফলের দাম বেড়েছে। রমজানের আগে থেকেই মাছ ও মাংসের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
বাজারে আকারভেদে প্রতিকেজি ইলিশ ৫০০-১৪০০ টাকা, রুই ৩২০-৪২০ টাকা, কাতল ৩৫০ টাকা, গ্লাসকার্প ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৮০০ টাকা, চাষের শিং ৩০০-৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি ২৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭০০ টাকা ও খাসির মাংস ৯০০-১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাঁচামরিচ আগের দামে ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, রসুন ৯০ টাকা টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে আদার দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। ১২০ টাকার আদা ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঈশ্বরদী বাজারের সবজি বিক্রেতা রবিউল ইসলাম শাহীন বলেন, প্রতিবারই রমজানের শুরুতেই সবজির চাহিদা বাড়ে। এজন্য দামও বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দুদিন আগেও বেগুন ২০-২৫ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ ৫০ টাকায় কিনে ৬০-৬৫ টাকা বিক্রি করেছি।
পৌর শহরের কলেজ রোডের সবজি বিক্রেতা আলমাস আলী বলেন, সকালে আড়তে গিয়ে শসা, লেবু ও বেগুন বেশি দামে কিনতে হয়েছে। আড়তদাররা বলেছে, চাহিদা বেশি তাই দামও বেড়েছে। আমরা বেশি দামে কিনেছি তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
সবজি কিনতে আসা অটোচালক আনিসুর রহমান বলেন, আমি প্রায় প্রতিদিনই সকালে বাজারে আসি। বুধবার সকালে বেগুন কিনেছিলাম ২৫ টাকা কেজি। আজ সকালে বাজারে এসে দেখছি বেগুন ৬০-৭০ কেজি। রাতারাতি বেগুনের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় আমি হতভম্ব। এছাড়া শসা, পটল, ঢ্যাঁড়সসহ অন্য সবজির দামও বেড়েছে। রোজার শুরুর আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বাজার মনিটরিং করার দরকার ছিল। কিন্তু কেউ তো বাজার মনিটরিং করতে আসে না। তাই আর যা ইচ্ছা সেভাবেই দাম নিচ্ছে। আর আমরা ক্রেতারা বাধ্য হয়ে দিয়ে যাচ্ছি।
স্কুলশিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, মাছ ও মাংস কিনতে এসেছিলাম। শবেবরাতের পর থেকে মাছ-মাংসের দাম না বাড়লেও দেশি ফল ও কাঁচা সবজির দাম বেশ চড়া। বিশেষ করে লেবু, শসা ও বেগুনের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে।
ঈশ্বরদীর নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক ও স্যানেটারি ইন্সপেক্টর সানোয়ার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিবারই বাজার মনিটরিং করা হয়। এবারো মনিটরিং কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়া রমজানে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে শিগগির মনিটরিং হবে।
এসজে/জেআইএম