বাবা-মা ছাড়া ঈদ পানসে লাগে তাদের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জামালপুর
প্রকাশিত: ০৮:১৩ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২৩

ঈদের আনন্দ তাদের কাছে যেন বিষাদের মতো। সমবয়সী অন্যদের নতুন জামা-কাপড় পরে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে দেখে তাদের মনে দাগ কেটে যায়। কেননা বাবা-মায়ের আদর-সোহাগ থেকে বঞ্চিত তারা।

বলছি সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে জামালপুর দক্ষিণ কাচারীপাড়া এলাকায় গড়ে ওঠা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের সুবিধাবঞ্চিত সাত শিশুর কথা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত ও নির্যাতিত শিশুদের একটি বিশ্বস্ত স্থান হয়ে উঠেছে এটি। বর্তমানে এখানে ৭৯ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে কুড়িয়ে পাওয়া রয়েছে সাতজন।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘ দুই বছর ধরে এখানে বসবাস করছে বাপ্পী। রাস্তা থেকে তার ঠাঁই হয়েছে এখানে। বাপ্পী জাগো নিউজকে বলে, একসময় তার সবই ছিল। কিন্তু বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে সব শেষ হয়ে যায় তার। দিনের পর দিন চলে শারীরিক নির্যাতন। তাই পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় সে। ঈদ এলে মাকে খুব মনে পড়ে বলে জানায় বাপ্পী।

রমজান নামের আরেক শিশু বলে, ‘একটু দুষ্টুমি করতাম বলে মা আমাকে মারধর করতো। তাই কষ্ট নিয়ে বাড়ি থেকে চলে আসি। এখন বাবা-মায়ের কথা খুব মনে পড়ে। কিন্তু এখন কেউ নিতে আসে না। তাই বারান্দার গ্রিল ধরে মাঝে মধ্যেই কান্নাকাটি করি। ঈদ আসলে খুব মনে পড়ে তাদের কথা।’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

তবে সুবিধাবঞ্চিত এ শিশুরা যেন অন্য শিশুদের মতো ঈদ উদযাপন করতে পারে, সেজন্য ঈদে বিশেষ আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। জামালপুর শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের এডুকেটর নুরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, এখানে যারা আছে সবাই অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত। এখানে সাতজন শিশু রয়েছে যাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময় তাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। এরপর থেকে তারা এখানেই আছে।

তিনি বলেন, ‘এদের মধ্যে একজনের নাম মিনহাজ। বাড়ি রংপুর। ওর বাবা দুই বিয়ে করার কারণে ছেলেটির ওপর অনেক শারীরিক নির্যাতন হতো। এ কারণে মিনহাজ ট্রেনে করে জামালপুর চলে আসে। তবে রংপুরে কোথায় বাড়ি, সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারে না সে।

Jamal-(2).jpg

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এডুকেটর নুরুজ্জামান বলেন, প্রতি ঈদে তাদের জন্য সরকার থেকে নতুন পোশাক দেওয়া হয়। ভালো ভালো খাবার পরিবেশন করা হয়। ঈদের পরদিন একটি জায়গায় ঘুরিয়ে আনা হয় সবাইকে।

আমির উদ্দিন। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে কেয়ার গিবার হিসেবে কর্মরত। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে যেসব শিশু রয়েছে তারা সবাই অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত, নির্যাতিত এবং পাচারকারীদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত। আজ এসব শিশুরা যদি বাইরে ছড়ানো ছিটানো থাকতো তবে সমাজের অনেক খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়তো।

তিনি বলেন, ঈদের দিন ওদের মন ভালো রাখার জন্য বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে তাদের মন কিছুটা হলেও শান্তি খুঁজে পায়।

বিজ্ঞাপন

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

জামালপুর সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌসী জাগো নিউজকে বলেন, যাদের বাবা-মা নেই তাদের সবসময় একটা আক্ষেপ থেকেই যায়। তারপরও যতটুকু সম্ভব এসব শিশুদের বাবা-মায়ের অভাবটা পূরণ করার চেষ্টা করা হয়। তাদের যেসব মৌলিক চাহিদা রয়েছে সেগুলো যথাসম্ভব পালন করা হয়।

নাসিম উদ্দিন/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।