পরিবারের দাবি

কুমিল্লায় যুবলীগ নেতা হত্যার ‘পরিকল্পনাকারী’ আওয়ামী লীগ নেতা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: ০৬:৫৫ পিএম, ০৬ মে ২০২৩
অভিযুক্ত শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে বোরকা পরে যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন হত্যার ঘটনায় ছয়দিন অবিবাহিত হলেও এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে নিহতের পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পুলিশের দাবি, খুনিদের ধরতে মাঠে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট।

এদিকে, নিহতের স্ত্রী পপি আক্তারের করা মামলার আসামিদের নাম প্রকাশ্যে এসেছে। তারা হলেন তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের মো. সুজন, আরিফ হোসেন, ইসমাইল হোসেন, মনাইরকান্দি গ্রামের শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার, জিয়ারকান্দি গ্রামের বাদল, শাকিল, দাউদকান্দির গোপচর গ্রামের শাহ আলম, তিতাসের জিয়ারকান্দি গ্রামের অলি হাসান ও কালা মনির।

আরও পড়ুন: কুমিল্লায় যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা

এই মামলার বেশির ভাগ আসামি গৌরীপুর বাজারে খুন হওয়া জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসাইন হত্যা মামলার আসামি।

জামালের পরিবারের দাবি, এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী মামলার ৪ নম্বর আসামি তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার।

এর আগে গত ৩০ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে দাউদকান্দির গৌরীপুর পশ্চিম বাজার ঈদগাহ এলাকার মসজিদ গলিতে জামাল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

জামাল তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি নোয়াগাঁও গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে এবং উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি গৌরীপুর পশ্চিম বাজার এলাকার ভাড়া বাসায় থাকতেন এবং ওই বাজারের ব্যবসায়ী ছিলেন।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া তিন দুর্বৃত্তের সবাই ছিলেন বোরকা পরা। দশ সেকেন্ডের মধ্যে তারা পরপর তিনটি গুলি চালিয়ে জামালের মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।

আরও পড়ুন: কুমিল্লায় যুবলীগ নেতা হত্যার ৪২ ঘণ্টায়ও হয়নি মামলা

স্থানীয় এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারের লোকজন জানায়, গৌরীপুর বাজারসহ তিতাস উপজেলা সদরের আধিপত্য নিয়ে ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে খুন করা হয় চেয়ারম্যান মনির ও তার সহযোগী মহিউদ্দিনকে। সাড়ে ছয় বছর পর অনেকটা একইভাবে খুন করা হয়েছে মনিরের অনুসারী যুবলীগ নেতা জামালকে। এছাড়া জামাল মনিরের হত্যা মামলার তদারকি করতেন।

নিহত জামালের শ্যালিকা সুপা বেগম বলেন, যেখানে জামাল ভাই খুন হয়েছেন তার সামনের ভবনের দোতলায় আমাদের বাসা। গুলির শব্দ শুনে আমি বাসা থেকে নেমে ভাইকে কোলে তুলি। তখনো তার জ্ঞান ছিল। মৃত্যুর আগে তিনি খুনিদের মধ্যে সুজন ও আরিফের নাম বলেছেন। আমরা খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার চাই।

এ মামলার সাক্ষী তিতাসের জিয়ারকান্দি গ্রামের মো. জাহিদ হোসেন বলেন, খুনিরা জামালের বুকের মাঝে ও পেটের বাম পাশে গুলি করার পর ফাঁকা গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। তখন আমরা বোরকা পরা একজন আরিফকে চিনতে পেরেছি।

নিহতের স্ত্রী পপি আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেছেন, পুলিশ চাইলেই এ ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে পারে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ছয়দিনেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জামাল হত্যা মামলার আসামিরা সবাই তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল শিকদারের অনুসারী।

মনির হত্যা মামলা তুলে না নেওয়ার জেরে তাকে সোহেল শিকদারসহ অন্যরা হত্যা করেছেন দাবি করে জামালের স্ত্রী এজাহারে উল্লেখ করেন, জামালকে হত্যার আগে তার ওপর সোহেল শিকদারের নেতৃত্বে একাধিকবার হামলা এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

সোহেল শিকদার মনির খুনেরও পরিকল্পনাকারী ছিলেন বলে দাবি করে পরিবারের সদস্যরা জানান, মনির হত্যা মামলাটি আপস করার জন্য আসামিরা মনিরের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার ও জামালকে বিভিন্নভাবে চাপ দিতেন।

হত্যাকাণ্ডের কিছু সময় আগে জামাল হোসেন যখন বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তখন মামলার ৩ নম্বর আসামি ইসমাইল সেখানে অবস্থান করে জামাল হোসেনকে ঠাণ্ডা পানি খাওয়ানোর কথা বলে সময় ক্ষেপণ করেন। এর কিছুক্ষণ পরই বোরকা পরা তিন সন্ত্রাসী এসে গুলি চালায়।

মনির নিহত হওয়ার পর জামাল হোসেন তার গ্রুপের নেতৃত্ব এবং হত্যা মামলার তদারকি করতেন জানিয়ে এজাহারে বলা হয়, মনির হত্যা মামলায় ডিবি পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হন সোহেল শিকদার। পরবর্তীকালে জামিনে বেরিয়ে এসে জামাল এবং মনির হত্যার মামলার বাদী নিহতের স্ত্রীকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিতে থাকেন।

মনিরের ঢাকার বাসায় গিয়ে তার স্ত্রী এবং জামালকে এলাকায় প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পরে মনিরের স্ত্রী ঢাকার কদমতলী থানায় এ বিষয়ে সোহেল শিকদারের নামে সাধারণ ডায়েরিও করেন।

এছাড়া ২০২২ সালের ২ নভেম্বর মনির হত্যা মামলায় সাক্ষীদের নিয়ে আদালতে আসেন জামাল হোসেন। ওই সময় আদালতের অভ্যন্তরে জামালসহ মামলার সাক্ষীদের ওপর হামলা করেন সোহেল শিকদারসহ অন্যরা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার বলেন, আমি তিতাসের বাসিন্দা। আর ঘটনা ঘটেছে দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজারে। এর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি সেখানে ছিলামও না।

তিনি আরও বলেন, আমাকে রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করার জন্য মূলত একটি মহল একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আরও পড়ুন: কুমিল্লায় যুবলীগ নেতা হত্যার দুদিন পর ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

দাউদকান্দি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তাদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশের সঙ্গে অন্য সংস্থাও আন্তরিকভাবে কাজ করছে। আশা করছি, দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আব্দুল মান্নান বলেন, পরিকল্পনা করেই জামালকে হত্যা করা হয়েছে। যাকে বলা হয় ‘টার্গেট কিলিং’। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা কেউ রেহাই পাবে না। তাদের গ্রেফতার করতে মাঠে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

জাহিদ পাটোয়ারী/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।