চা শ্রমিক মায়ের সংগ্রামে ছেলে আজ ডাক্তার
পৃথিবীতে আমাদের সবচেয়ে প্রিয় মানুষদের একজন হলেন ‘মা’। মা ডাকে প্রাণ জুড়ায় না এমন মানুষ কমই আছে। পৃথিবীর সব মায়েদের প্রতি সম্মান জানাতে পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব মা দিবস। মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে বিশ্বে ‘মা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্ব মা দিবসে আজ আমরা এমনই এক মায়ের সংগ্রামের গল্প জানবো যার হাড়ভাঙা পরিশ্রমে ছেলে আজ চিকিৎসক হয়েছেন।
আমরা বলছি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ইটা চা বাগানের শ্রমিক মিনতি যাদবের (৫৮) কথা। তার স্বপ্ন ছিল ছোট ছেলে একদিন চিকিৎসক হবেন। সবাই তাকে ডাক্তারের মা বলবেন। কিন্তু সাধ থাকলেও যে সাধ্য ছিল না মিনতির। সীমিত মজুরির আয় দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলতো তার। তবুও স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেননি তিনি। স্বামী মানিক যাদবকে (৬২) সবসময় তার স্বপ্নের কথা বলতেন।
মজুরি থেকে পাওয়া অর্থের একটি অংশ জমা রাখতেন সন্তানের পড়াশোনার জন্য। অবশেষে ২০১৪ সালে ছেলে সনজিৎ যাদব (২৭) মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মিনতির চোখে আশার আলো জাগে। ২০২১ সালে সনজিৎ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ছেলের কৃতিত্বে এলাকাবাসী মিনতি যাদবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ঘর থেকে বেরোলেই সবাই তাকে ‘ডাক্তারের মা’ বলে ডাকেন।
মা দিবসে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ইটা চা বাগানে গিয়ে মিনতি যাদবের সঙ্গে কথা হলে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে যান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ঘামঝরানো শ্রমে আমার আশা পূরণ হয়েছে। এখন আমার ছেলে ডাক্তার। সে মানুষের সেবা করে। এলাকাবাসী আমাকে ‘ডাক্তারের মা’ বলে ডাকে। আমার খুব আনন্দ লাগে।
তিনি বলেন, কষ্টের দিনগুলো এখন আমার কাছে সুখে পরিণত হয়েছে। আমি সফল হয়েছি। সনজিৎ আগামী বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। বর্তমানে সে একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে কর্মরত। আমি আশা করি, আমার ছেলে বিসিএস ক্যাডার হবে।
ওই বাগানের শ্রমিক দিপক দাস জাগো নিউজকে বলেন, সনজিৎ যাদব পিছিয়ে পড়া চা শ্রমিক পরিবারের সন্তান। সে তার মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। এতে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত।
চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি নাসিম আহমদ বলেন, মিনতি যাদবের ছেলে ডাক্তার হয়েছে এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। তাদের পরিবার খুব অসচ্ছল ছিল। হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফল স্বরূপ মিনতির ছেলে আজ ডাক্তার।
সনজিৎ যাদব জাগো নিউজকে বলেন, আমার মায়ের হাড়ভাঙা পরিশ্রমে আমি ডাক্তার হয়েছি। এই সাফল্যের পেছনে তার অবদান বেশি। ডাক্তার হওয়ায় মায়ের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এখন মায়ের দুঃখ ঘোচানোর চেষ্টা করবো। আগামী বিসিএস পরীক্ষায় আমি অংশগ্রহণ করবো। এতে সবার আশীর্বাদ প্রার্থী।
আব্দুল আজিজ/এমআরআর/এএসএম