স্কুলের পাশে ময়লার ভাগাড়, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা
মাদারগঞ্জ পৌরসভার পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের ঈদগাহ মাঠ এলাকা দিয়ে চলে গেছে জামালপুর-মাদারগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক। এই রাস্তা দিয়ে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ছোট-বড় অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে। ঈদগাহ মাঠ এলাকার রাস্তার পাশেই বালিজুড়ী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ রাস্তা ধরে প্রতিদিন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে।
তবে রাস্তাটির পাশেই দিনের পর দিন ফেলা হচ্ছে শহরের ময়লা-আবর্জনা। এতে মশা-মাছির উপদ্রবসহ দূষিত হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ আশপাশের বাসিন্দারা। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কে কাছেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকশ গজের মধ্যেই আরও একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি মসজিদ, একটি মাদরাসা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং বসতবাড়ি রয়েছে। অথচ সড়কের সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে ময়লা-আবর্জনা। এতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে বিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায়। দুর্গন্ধ সহ্য করে শিক্ষার্থী, পথচারী ও যানবাহনের যাত্রীদের ময়লা-আবর্জনার পাশ ঘেঁষে নাকে হাত বা কাপড় চেপে চলাফেরা করতে হয়।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৯ সালে ১০ দশমিক ৭৯ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে মাদারগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয় এবং ২০১৮ সালে এটি প্রথম শ্রেণির স্বীকৃতি লাভ করে। কিন্তু বর্জ্য অপসারণে পৌরসভার কার্যকরী কোনো পরিকল্পনা এখনো চোখে পড়েনি। ফলে ৩০ হাজারের অধিক জনসংখ্যার এই পৌরসভায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন থেকে চার টন বর্জ্য যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থেকে মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ধরনের রোগ-জীবাণু। ফলে শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী মানুষের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

স্থানীয় অটোরিকশাচালক সাকিব, সোলাইমান, কাদের মিয়াসহ আরও কয়েকজন জানান, পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন এলাকায় প্রতিদিন পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এই আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। নাকে হাত বা কাপড় চেপে তারা পারাপার হচ্ছেন। মাঝে মধ্যেই সেগুলোতে আবার আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেসময় কালো ধোঁয়ার কারণে ওই সড়কে যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে তাদের। তবে বিষয়টিতে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
বালিজুড়ী মডেল সরকারি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভীর হাসান ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহসিন জানালো, ময়লার দুর্গন্ধে তারা ঠিকমতো ক্লাস করতে পারে না। মাঠে খেলাধুলা করতেও কষ্ট হয়। উৎকট গন্ধে মাঝেমধ্যে তাদের বমি হয়। ফলে অনেকে স্কুলে আসতে চায় না।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বিথী আফরিন বলেন, দুর্গন্ধের কারণে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি কমে গেছে। বাচ্চারা এই স্কুলে পড়তে চায় না। অনেক অভিভাবকই তাদের বাচ্চাদের অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া ময়লা পোড়ানোর সময় বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এসময় শিক্ষার্থীদের ব্যাপক কষ্ট হয়। বিষয়টি বিদ্যালয়ের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র মির্জা কবিরকে জানিয়েছি। তবে এখনো এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
মাদারগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি মির্জা গোলাম কিবরিয়া কবির বলেন, ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। এরইমধ্যে ডাম্পিং জোনের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আগামী জুনের মধ্যে এ সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলিশায় রিছিল জাগো নিউজকে বলেন, জায়গাটি এরইমধ্যে পরিদর্শন করা হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জন্য প্রধান শিক্ষককে বলা হয়েছে।
মো. নাসিম উদ্দিন/এমআরআর/জেআইএম