২৫ চক্রের তত্ত্বাবধানে দেহ ব্যবসা ও নারী বেচাকেনা
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, নগরীতে ২৫টি চক্রের তত্ত্বাবধানে চলছে দেহ ব্যবসা ও নারী বেচাকেনা। বুধবার হিলভিউ আবসিকের ৯ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলা থেকে অবৈধ দেহ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের তিন সদস্য নাছির উদ্দিন প্রকাশ হাবিব (৪৫), আলী হোসেন (২৮) ও কুলসুম আক্তারকে (৩৫) আটক করে পুলিশ। এরপর এসব তথ্য জানায় পুলিশ।
পুলিশ আরো জানায়, কখনো প্রেমের ফাঁদে আবার কখনো চাকরির প্রলোভনে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নিয়ে আসা হয় সহজ সরল এসব মেয়েদের। ভালবাসার অভিনয় করে বিয়ের প্রলোভনও দেখানো হয়। এরপর নিয়ে যাওয়া হয় শহরে।
সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রথম কয়েকদিন স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করলেও ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় কথিত প্রেমিকের আসল চেহারা। বুধবার দিবাগত রাতে নগরীর পাঁচলাইশ হিলভিউ থেকে তিন কিশোরীকে উদ্ধার করার পর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। উদ্ধার তিন কিশোরী জানায়, বিগত পাঁচ বছর ধরে তাদেরকে দিয়ে এভাবে দেহ ব্যবসা করানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কিশোরী বলনে, ‘প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আমাকে বিয়ে করবে বলে নিয়ে আসে শহরে। কিন্তু শহরে এসে তার আচরণ পাল্টে যায়। আমাকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করায়। রাজি না হলে অমানুষিক নির্যাতন করে। পরে আমাকে ইউসুফের (দালাল) কাছে দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়।’
প্রেমিক ওই কিশোরীর অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও তাকে বাধ্য করা হতো অসামাজিক কার্যকলাপে। অনেক সময় কিশোরী বাধা দিলে, চালাত অমানুষিক নির্যাতন। এক প্রকার বাধ্য হয়ে এভাবে গ্রাম থেকে প্রেমিকের ডাকে ছুটে আসা কিশোরীরা শহরে দালালদের কাছে বিক্রি হয়ে যায় ‘পতিতালয়ে।’
নগরীর পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ আবসিক এলাকার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বুধবার তিন কিশোরীকে উদ্ধার করার পর এমনই তথ্য দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই তিন জনের দুই কিশোরী।
এমনকি ওই তিন কিশোরীকে তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত আটকে রেখে যৌন ব্যবসায় বাধ্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে পুলিশ বলছে, নগরীতে এ ধরনের কমপক্ষে ২০-২৫টি চক্র রয়েছে যারা নারী বেচা-কেনা এবং দেহব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ ধরনের ব্যবসায়ীরা কেউ বিভিন্ন ফ্ল্যাটে ভাড়া বাসা নিয়ে আবার কেউ অলিখিত পতিতালয়ে এ দেহ ব্যবসা পরিচালনা করছে।
পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘বুধবার উদ্ধার হওয়া তিন কিশোরী প্রতারকের খপ্পরে পড়ে দালালদের কাছে বিক্রি হয়েছে বলে আমাদেরকে জানিয়েছে। আর এর সত্যতাও আমরা গ্রেফতার তিন দালালের কাছ থেকে পেয়েছি। তাই তাদের নামে অবৈধ দেহ ব্যবসা ও মানবপাচার আইনে দু’টি মামলা হয়েছে।’
অবৈধ এ দেহ ব্যবসার সাথে নগরীতে ২০-২৫টি চক্র আছে বলে জানান পাঁচলাইশ থানার এ পরিদর্শক। পাঁচলাইশ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক আবুল কাশেম জানান, ‘তিন কিশোরীকে ফ্ল্যাটে আটকে রেখে অসামাজিক ব্যবসা করতো বলে অভিযোগ পেয়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযানে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।’
বাড়ির মালিক ইঞ্জিনিয়ার তাজুল ইসলামের বরাত দিয়ে এসআই আবুল কাশেম জানান, গ্রেফতার তিনজন এই মাসেই তার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন। মঙ্গলবার রাতে ওই ফ্ল্যাটে বেশ কয়েকজন পুরুষের আসা যাওয়ার বিষয়টি টের পেয়ে বাড়ির দারোয়ান তাজুল ইসলামকে জানায়।
পরে তিন কিশোরীর একজন কৌশলে পালিয়ে এসে তাকে বিষয়টি জানালে, তিনি পুলিশকে খবর দেন। এর আগে এ চক্রটি নগরীর খুলশী এলাকার একটি ভবনে এ ব্যবসা পরিচালনা করতো বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
জীবন মুছা/এসএইচএস/পিআর