লাভের আশায় চামড়া কিনে ফড়িয়াদের মাথায় হাত

মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুরুল ইসলাম ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ১২:৩২ পিএম, ০৯ জুলাই ২০২৩

ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪০ থেকে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। সেইসঙ্গে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সরকারের এই নির্দেশনা না মেনে ট্যানারি মালিকরা প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম বলছেন ২৫ থেকে ৩০ টাকা, আর খাসির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকা। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী বা ফরিয়ারা।

শনিবার (৮ জুলাই) সকালে ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী শম্ভুগঞ্জ চামড়া বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে সরকারনির্ধারিত দামের প্রায় অর্ধেকে চামড়া কিনছেন।

লাভের আশায় চামড়া কিনে ফড়িয়াদের মাথায় হাত

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ট্যানারির ক্রেতারা বলছেন, সরকারনির্ধারিত দামেই চামড়া কেনা হচ্ছে। তবে, কিছু চামড়া নষ্ট, যেগুলো ফড়িয়ারা কম দামেই তাদের কাছে বিক্রি করছেন।

আরও পড়ুন: চামড়ার দাম পাওয়া নিয়ে এবারও অনিশ্চয়তা

শম্ভুগঞ্জ বাজারে ত্রিশাল থেকে চামড়া বিক্রি করতে এসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী বিঞ্চু ঋষি। তিনি বলেন, আমি গরু ও খাসি মিলিয়ে ২০ হাজার টাকার চামড়া কিনেছি। প্রতিটি গরুর চামড়ায় লবণ, পরিবহন ও অন্য খরচসহ ১৫০ থেকে ২২০ টাকা বাড়তি লেগেছে। সবমিলিয়ে ওই চামড়ার দাম পড়েছে ৭০০ টাকা। ট্যানারির ক্রেতারা সেই চামড়ার দাম বলে ৬০০ টাকা। যে চামড়ার দাম পড়েছে ৫০০ টাকা, সেই চামড়ার দাম বলে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। ট্যানারির ক্রেতারা যে দাম বলে এতে প্রতি বর্গফুট চামড়ার পড়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। কোনো ট্যানারির ক্রেতারাই এর চেয়ে বেশি দাম বলে না। এতে বাধ্য হয়েই কিছু চামড়া বিক্রি করেছি।

লাভের আশায় চামড়া কিনে ফড়িয়াদের মাথায় হাত

তিনি আরও বলেন, আমি খাসির চামড়া কিনেছি ১০ থেকে ১৫ টাকা করে। সেই চামড়ায় খরচসহ দাম পড়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। সেই খাসির চামড়ার দাম বলছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। তাই বিক্রি করছি না। সামনে অনেক বাজার আছে। অপেক্ষা করে দেখব চামড়ার দাম বাড়ে কি না। দাম না বাড়লে লোকসানেই চামড়া বিক্রি করতে হবে।

লাভের আশায় চামড়া কিনে ফড়িয়াদের মাথায় হাত

ফড়িয়া ব্যবসায়ী সেন্টু রবিদাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে চামড়া বিক্রি করতে শম্ভুগঞ্জ বাজারে এসেছেন। তিনি বলেন, আমি সুদের ওপরে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে চামড়া কিনেছি। লাভের ২৫ শতাংশ ওই ব্যক্তিকে দিতে হবে। কিন্তু লোকসান হলে তার ভাগ টাকার মালিক নেবে না। লোকসানের সব টাকাই আমাকে বহন করতে হবে।

আরও পড়ুন: ঢাকায় প্রতি বর্গফুট চামড়ার সর্বোচ্চ দাম ৫৫ টাকা, বাইরে ৪৮

তিনি বলেন, যে পরিমাণ চামড়া কিনেছি, তাতে মনে হচ্ছে প্রতি গরুর চামড়ায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা লোকসান হবে। কিছু খাসির চামড়া কিনেছিলাম, এগুলোর দামই বলছে না ট্যানারির ক্রেতারা।

নান্দাইল থেকে চামড়া বিক্রি করতে শম্ভুগঞ্জ এসেছেন ফড়িয়া ব্যবসায়ী শহিদ মিয়া। তিনি বলেন, আমি ১৩ লাখ টাকার চামড়া কিনেছি। প্রতি গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত কিনেছি। প্রতি চামড়ায় লবণ, পরিবহন ও অন্য খরচ মিলিয়ে ১৩০ থেকে ২৫০ টাকা বাড়তি লেগেছে। ট্যানারির ক্রেতারা চামড়ার যে দাম বলে তাতে প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম পড়ে ২২ থেকে ২৫ টাকা। প্রতি চামড়ায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা লোকসানে কিছু চামড়া বিক্রি করেছি।

লাভের আশায় চামড়া কিনে ফড়িয়াদের মাথায় হাত

তিনি আরও বলেন, খাসির চামড়া কিনেছিলাম ১০ থেকে ১৫ টাকায়। সেই চামড়ায় খরচসহ দাম পড়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ক্রেতারা খাসির চামড়ার দামই বলছে না। সরকার বলেছিল, এবার চামড়ার দাম কিছুটা বাড়বে। তাই চামড়া কিনেছিলাম। কিন্তু, এখন লোকসানের চিন্তায় ঘুম আসে না।

ঈশ্বরগঞ্জ থেকে চামড়া বিক্রি করতে শম্ভুগঞ্জে এসেছেন শুকলাল রবিদাস। তিনি বলেন, আমি সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার চামড়া কিনেছি। সব টাকাই সুদের ওপরে নেওয়া। টাকার মালিককে লাভের ২৫ শতাংশ দিতে হবে, কিন্তু লোকসানের পুরোটাই আমাকে বহন করতে হবে। বাজারে ট্যানারির অনেক ক্রেতা এসেছেন। কিন্তু দাম বলছেন কম। কম দামে চামড়া বিক্রি করা ছাড়া উপায় নেই। তাই, বাধ্য হয়েই বিক্রি করতে হচ্ছে।

লাভের আশায় চামড়া কিনে ফড়িয়াদের মাথায় হাত

দুই লাখ টাকার চামড়া কিনেছেন সুনামগঞ্জের শফিকুল ইসলাম। তিনিও ভালো দাম পাওয়ার আশায় শম্ভুগঞ্জে বিক্রি করতে এসেছেন। শফিকুল বলেন, বাজারে ক্রেতা অনেক, কিন্তু দাম কম বলে। বিক্রি না করলে টাকার সুদের পরিমাণ বাড়বে, তাতে লোকসানের পরিমাণও বাড়বে। যে কারণে বাধ্য হয়ে লোকসানেই চামড়া বিক্রি করছি।

আরও পড়ুন: লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম ১৫০ টাকা!

শম্ভুগঞ্জ বাজারের ইজারাদার আসাদুজ্জামান সোহেল বলেন, এবার প্রতিটি গরুর চামড়ায় ৪০ টাকা করে হাসিল ধরা হয়েছে। তবে বাজারের যে অবস্থা তাতে মনে হয় না এই বছর আমাদের কোনো লাভ থাকবে।

রিলায়েন্স ট্যানারির ক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, আমরা সরকারনির্ধারিত দামেই চামড়া কিনছি। চামড়া দেখেই বলতে পারি, কোনটা কত ফুট হবে। অনেক চামড়া নষ্ট, সেগুলো আমরা কিনছি না। যদি ব্যবসায়ীরা দিতে চায়, তাহলে কিছুটা কম দামে কিনছি।

এমআরআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।