সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ‘ঝাউদি গিরি’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মাদারীপুর
প্রকাশিত: ০৫:৫৫ পিএম, ০৪ আগস্ট ২০২৩

দিনের পর দিন দেবে যাচ্ছে মাদারীপুরের ব্যতিক্রমী স্থাপনা ‘ঝাউদি গিরি’। সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীন এ ঐতিহ্য। বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও এটি রক্ষায় তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের বিশেষ এ গিরিটি অবস্থিত। সমতল ভূমিতে কোনো পাহাড় বা গিরি নেই বলেই স্থানীয়রা উঁচু এ স্তম্ভটির নাম দিয়েছেন গিরি। প্রায় ৬০ ফুট উঁচু স্তম্ভটি কে বা কারা নির্মাণ করেছিলো তার সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। স্তম্ভটি কি কাজে ব্যবহৃত হতো সেটিও সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেনি।

লোকমুখে প্রচলন রয়েছে, ৩০০ বছর আগে সুউচ্চ এ স্তম্ভটি নির্মিত হয়। অনেকের ধারণা, ১৭২০-১৭২৪ সালের মধ্যে এটি নির্মিত হয়েছিল। কারও কারও মতে নবাব আলীবর্দী খাঁ এ গিরির নির্মাতা। কেউ কেউ মনে করেন, সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এ অঞ্চলে মগদের আগমন ঘটে। তারা এ অঞ্চলে বসতি গড়েছিলেন। বহিঃশত্রুদের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা ও নজরদারি করার জন্য এ স্তম্ভটি নির্মাণ করেছিলেন।

আরও পড়ুন: হারিয়ে যাচ্ছে ৫০০ বছরের নিদর্শন, সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই

তবে এলাকার একাধিক প্রবীণ ব্যক্তির কাছ থেকে জানা গেছে, জমি-জমার সীমানা নির্ধারণের জন্য তৎকালীন সময়ে এ গিরি নির্মাণ করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, এ অঞ্চলের কোনো মৌজায় জমির পরিমাপে বিরোধ দেখা দিলে এ গিরিকে মূল পিলার ধরে সমাধান করা হয়। ২০ ফুট দৈর্ঘ্যে ও ৪ ফুট প্রস্থের গিরিটি চুন, সুরকি ও পাতলা ইট দিয়ে তৈরি। গিরির ওপর থেকে প্রায় ৫-৬ ফুট ধসে গেছে। স্তম্ভটি মাটির নিচেও প্রায় ৩-৪ ফুট দেবে গেছে। স্তম্ভের ভিতরের অংশ সম্পূর্ণ ফাঁকা। পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি প্রবেশ দ্বার রয়েছে।

স্থানীয় আফজাল হোসেন বলেন, গিরিটি কবে তৈরি হয়েছে আমাদের জানা নেই। আমার দাদাও এ গিরি দেখেছেন। শহর থেকে মানুষ আসে, ছবি তোলে, ভিডিও করে। এটি এখনই রক্ষা করা না হলে একদিন এ ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে।

গিরি দেখতে আসা মো. সাইদুল মুন্সি বলেন, মাঝেমধ্যে বন্ধুদের নিয়ে এখানে আসি। নিরিবিলি পরিবেশ তাই খুব ভালো লাগে। দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এ ঐতিহ্য। পুরোনো ঐতিহ্য রক্ষা করে নতুনদের মধ্যে তুলে ধরতে হবে।

আরও পড়ুন: ধ্বংসের পথে দেড়শ বছরের পুরোনো মুকুন্দিয়া মঠ

স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক রাজন মাহমুদ বলেন, ১৭০০ শতাব্দীর দিকে পর্তুগিজ দলদস্যুরা গিরিটি নির্মাণ করেন। সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে পর্তুগিজ জলদস্যুরা লুণ্ঠন করে ওই মালামাল গিরিতে রাখতেন। বছরের একটি সময়ে লুণ্ঠিত মালামাল তারা নিয়ে যেতেন। পরবর্তীতে ইংরেজ শাসন আমলে গিরিটিকে জমি জরিপের পিলার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

মাদারীপুরের ইতিহাস গবেষক সাংবাদিক সুবল বিশ্বাস বলেন, দিন দিন আমাদের এ ঐতিহ্যবাহী গিরিটি ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। এটা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। সেই সঙ্গে প্রশাসনের উচিত এটাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসা।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাইনউদ্দিন বলেন, প্রতিটি জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এটি রক্ষার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/আরএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।