আইসক্রিমের জন্য ভিড় জমে ওয়ান মিনিটে
ইলিশের বাড়ি বলা হয় চাঁদপুরকে। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনা রয়েছে এ জেলায়। এখানকার ইলিশের স্বাদ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন লোকজন।
আর এই ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরেই তৈরি হয় বিখ্যাত এক আইসক্রিম। যার নাম ‘ওয়ান মিনিট আইসক্রিম’। মাত্র এক মিনিটেরও কম সময়ে তৈরি হয় এই আইসক্রিম।

চাঁদপুর শহরের কালীবাড়ি মোড় প্রেস ক্লাব রোডে অবস্থিত একটি দোকানে পাওয়া যায় বিখ্যাত এই আইসক্রিম। ১৯৬৩ সালের দিকে পূর্বপুরুষের হাত ধরে শুরু হওয়া প্রতিষ্ঠানটি সগৌরবে চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান কর্ণধাররা। আর ওই দোকানে গেলে এক মিনিটের মধ্যে যে কোনো ধরনের মিষ্টান্ন বা আইসক্রিম পাওয়া যায় বলে প্রতিষ্ঠানটির নামই হয়ে গেছে ‘ওয়ান মিনিট’।
ওয়ান মিনিটে আইসক্রিম তৈরি শুরু হয় ১৯৮২ সাল থেকে। বিদ্যুতের সাহায্যে মাত্র এক মিনিটেরও কম সময় ব্যয় হয় এই আইসক্রিম তৈরিতে। এর জন্য রয়েছে স্বয়ংক্রিয় মেশিন, যা ভারত থেকে আনা হয়েছে। তবে শুধু আইসক্রিমই নয়, ওই দোকানের মিষ্টি, দই, রসমালাই, সন্দেশ বেশ সুস্বাদু।

প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে ভিড় জমান পছন্দের আইসক্রিমের জন্য। ঈদ কিংবা বিভিন্ন উৎসবে ওয়ান মিনিটে ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। ওই সময় ওয়ান মিনিটের মিষ্টি ও আইসক্রিম পাওয়া যেন ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
ওয়ান মিনিটে আসা ড. জিহাদ বলেন, সময় পেলেই পরিবার কিংবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ওয়ান মিনিটের আইসক্রিম খেতে আসি। ওয়ান মিনিটের আইসক্রিমের সুনাম রয়েছে। এখানে আসলে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই হাতে আইসক্রিম পেয়ে যাই। বাইরে অনেক প্যাকেটজাত আইসক্রিম রয়েছে কিন্তু তার থেকে এই আইসক্রিমের স্বাদ একটু আলাদা। বাইরের আইসক্রিম থেকে হাতে বানানো এই আইসক্রিম আসলেই একটু ব্যতিক্রম।

ওয়ান মিনিটের কর্মচারী রাম চন্দ্র সিংহ ও সুনীল চন্দ্র দাস দুইজনেই জীবনের অর্ধেকটা সময় কাটিয়েছেন এই দোকানে। তারা জানান, এক বছর আগে ওয়ান মিনিটের আইসক্রিম বিক্রি হতো ৪০ টাকায়। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এখন প্রতিকাপ আইসক্রিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ কাপ আইসক্রিম বিক্রি হয়। খাঁটি দুধ আর চিনির মাধ্যমেই মূলত আইসক্রিমটি তৈরি হয়।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সম্পদ সাহা বলেন, ১৯৮২ সাল থেকে আমাদের আইসক্রিমটি বিক্রি শুরু হয়। শুরুর কিছুদিন পর থেকেই এটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রতিদিনই চাঁদপুরসহ বাইরের জেলা থেকেও লোকজন এখানে আসেন। বিশেষ করে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি এই তিনদিন বেশি ভিড় থাকে। দুধ, চিনি আর ফ্লেভারের মাধ্যমে আইসক্রিমটি তৈরি হয়। এতে কোনো ক্ষতিকারক উপাদান দেওয়া হয় না। গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে টাটকা আইসক্রিম তৈরি হয়।

তিনি বলেন, আমরা দুই ভাই। আমি আর আমার ছোট ভাই চম্পদ সাহা প্রতিষ্ঠানটি ধরে রেখেছি। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ওয়ান মিনিটের ঐতিহ্য রয়েছে। বংশ পরম্পরায় আমরা দুই ভাই এটি চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের বংশের অনেকেই এখন ভারতে থাকেন কিন্তু দোকানের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা এখনো বাংলাদেশেই আছি।
সম্পদ সাহা আরও বলেন, আমাদের ওয়ান মিনিটে আইসক্রিমটি ছাড়াও রসগোল্লা, চমচম, লাল মোহন, কালোজাম, সন্দেশ, রসমালাই, মিষ্টি দই, টক দই, লাড্ডু, নিমকিসহ নানা ধরনের মিষ্টান্ন পাওয়া যায়।
এমআরআর/জেআইএম