ব্রহ্মপুত্র-তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব শতাধিক পরিবার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৯:৫৪ এএম, ২০ আগস্ট ২০২৩

ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব কুড়িগ্রামের শতাধিক পরিবার। কেউ স্বজনদের বাড়ি, কেউ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে আবার কেউ খোলা আকাশের নিচে কোনোরকম দিন পার করছেন। নদীশাসনের স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সারাবছরই এমন দুর্ভোগে পোহাতে হয় এই অঞ্চলের মানুষের।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িগ্রামের উলিপুরের বজরা, চিলমারীর শাখাতি মনতলা ও গাজির পাড়া এলাকায় তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে শতাধিক ভিটেমাটি বিলীন হয়েছে। সহায়-সম্বলহীন মানুষজন তাদের আসবাবপত্র নিয়ে নিয়ে পড়েছে বিপাকে। জমিজমা না থাকায় রাস্তার ধারে, অন্যের জমিতে কোনোরকম ঠাঁই নেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। অন্যদিকে ভাঙনের কবলে পড়ে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পল্লী বিদ্যুৎতের সাবমেরিন প্রকল্পটিও আছে হুমকির মুখে।

শাখাহাতি গ্রামের বাসিন্দা ছাবিনা বেগম বলেন, নদী আমাদের সর্বনাশ করেছে। সারাবছর এমন করে নদীর ভাঙনে গ্রামের মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। গত দুদিন ধরে খাওয়া-দাওয়া নাই, ঘরবাড়ি সরাচ্ছি। বৃষ্টি আসলে মানুষের ঘরে না যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

আরও পড়ুন: বাঁধের ভাঙন আর মেরামতের বৃত্তে তাদের জীবন

ওই এলাকার আসমা বেগম বলেন, নদী তো সব শেষ করে দিয়েছে। সাত-আটদিন ধরে রাতে পলিথিন টাঙিয়ে আছি। গ্রামের অনেক মানুষ আমাদের মতো কষ্টে আছে। টাকা-পয়সা, জমিজমা থাকলে শহরে বাড়ি করতাম। এ অবস্থায় সরকার যদি নদীভাঙন বন্ধে কাজ করতো তাহলে আমাদের খুবই উপকার হতো।

ব্রহ্মপুত্র-তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব শতাধিক পরিবার

ওই এলাকার বাসিন্দা মিন্টু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, কোটি টাকা ব্যয়ে পল্লী বিদ্যুতের সাবমেরিন প্রকল্পটি ভাঙনের কবলে পড়লেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নীরব রয়েছে। শেষে ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় পাঁচ-ছয়দিন ধরে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষ সেটি উদ্ধারে কাজ করেছি। নয়তো আশপাশের প্রায় ২০ হাজার মানুষ বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হবে।

চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে শাখাহাতি, মনতলা ও গাঁজির পাড়া এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়। বিষয়টি আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েছি। এ ব্যাপারে আশানুরূপ অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। নদীভাঙনে ওই এলাকাগুলোতে প্রায় ৯০টি পরিবার ভোগান্তিতে পড়েছে। এদের কেউ কেউ আবাসন প্রকল্পসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

ব্রহ্মপুত্র-তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব শতাধিক পরিবার

চিলমারী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, ভাঙনের কবলে পড়ে দুই-তিনটি বৈদ্যুতিক খুঁটি নদীতে চলে গেছে। ওখানে ভাঙনের হুমকির মুখে পড়ে আছে পল্লী বিদ্যুৎতের সাবমেরিন প্রকল্পের ক্যাবল। আমরা দ্রুত সেটাকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করছি।

আরও পড়ুন: ‘হামাক তিস্তার ভাঙন থাকি বাঁচান’

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফিউল আলম বলেন, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়নের বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাদের লোক শাখাতির আশপাশের এলাকায় সরেজমিন দেখে এসেছে। আমাদের করার কিছু নাই। কেননা প্রকল্পের বরাদ্দ না থাকায় তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রে ভাঙনরোধে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ফজলুল করিম ফারাজী/জেএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।