জীবন যুদ্ধে হার না মানা ফুলতিরানী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৪:২৯ পিএম, ২০ আগস্ট ২০২৩

ফুলতিরানীর (২০) পা দুটো একেবারে ছোট আকৃতির, হাত দুটোও ছোট। শারীরিক উচ্চতা ৩২ ইঞ্চি। অন্যের সহযোগিতা ছাড়া চলতে না পারলেও পড়াশোনায় তার আগ্রহ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। অভাব-অনটনের সঙ্গে যুদ্ধ করে দিচ্ছেন এইচএসসি পরীক্ষা।

ফুলতিরানী কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের শোভনদহ গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মহেশ চন্দ্র ও পারুল বালা দম্পতির মেয়ে। কুড়িগ্রামের ভোগডাঙা মডেল কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফুলতিরানীর অভাবের সংসার। তার বাবা অসুস্থ। সংসারে উপার্জন করার মতো কেউ নেই। মা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালান। একদিকে অভাব অন্যদিকে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় সমাজের নানা উপহাস ও তাচ্ছিল্য সহ্য করতে হয় তাকে।

jagonews24

পড়াশোনার প্রতি সন্তানের প্রবল আগ্রহ দেখে পিছপা হননি মা পারুল বালা। ফুলতিরানী ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে জিপিএ ২.৭৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এ বছর চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা করছেন তিনি। তার ইচ্ছে সমাজের বোঝা না হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। অর্থনৈতিক সহযোগিতা পেলে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়া চালিয়ে যেতে চান।

ফুলতিরানীর মা পারুল বালা বলেন, অনেক মানুষ বলে প্রতিবন্ধী মেয়েকে কষ্ট করে পড়াশোনা করে কী লাভ। চাকরি করতে পারবে না, বিয়ে দিতেও পারবে না। আমার তখন কান্না আসে। মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী তাই বলে তো ফেলে দিতে পারি না। মেয়ের যতদূর ইচ্ছা পড়াশোনা করার আমার কষ্ট হলেও তাকে পড়াবো।

তিনি আরও বলেন, আমার খুব অভাবের সংসার। নাই থাকার ঘর। সরকারের কাছে দাবি মেয়েটাকে যদি একটা থাকার ঘরের ব্যবস্থা করে দিত খুবই উপকার হতো।

jagonews24

সহপাঠী সামিয়া রহমান বলেন, ফুলতিরানী খুবই হাস্যোজ্জ্বল। সংসারে অভাব থাকলেও তিনি কাউকে বুঝতে দেন না। আমরা তাকে সহপাঠী ভাবি কখনো অন্য চোখে দেখি না।

প্রতিবেশী রবিদাশ বলেন, ফুলতির বাবা থেকেও নেই। সংসারের সব বোঝা ওর মা পারুলের ওপর। খুব কষ্ট করে মেয়েটাকে পড়াচ্ছে। মেট্রিক পাশ করে এখন আইয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। আমি চাই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বিত্তবান বা সরকার ফুলতিরানীকে সহযোগিতা করুক।

jagonews24

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, আমার কলেজের এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে ফুলতিরানী পরীক্ষা দিচ্ছে। শুনেছি তার সংসারের অবস্থা মোটেই ভালো না। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে তার পড়াশোনার খরচ যোগাচ্ছেন। আমি ফুলতিরানীর জন্য দোয়া করি সে যেন এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করতে পারে। এছাড়া ফুলতিরানীকে উচ্চ শিক্ষায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বিত্তবান ও সরকারি সহযোগিতা করা উচিত।

ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মালেক বলেন, ফুলতিরানীর জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সরকারি কোনো সহযোগিতার ব্যবস্থা হলে তাকে দেওয়া হবে।

ফজলুল করিম ফারাজী/এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।