নারীর জরায়ুর অস্ত্রোপচার করলেন অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশিত: ০৯:৩১ এএম, ৩০ আগস্ট ২০২৩

চুয়াডাঙ্গায় মির্জা খাতুন (৫৫) নামে এক নারীর জরায়ুতে ভুল অস্ত্রোপচারের অভিযোগ উঠেছে। আর অস্ত্রোপচার করেছেন অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট। এরপর থেকে ওই নারীর জীবন সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। অপারেশনের স্থানে জ্বালা—যন্ত্রণা এবং পেট ফুলে যাওয়া নিয়ে তিনি এখন সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

অসুস্থ মির্জা খাতুন দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর নওদাপাড়া গ্রামের কিতাব আলীর স্ত্রী। তিনি সদর হাসপাতালের ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়নের তত্ত্বাবধানে আছেন। রোগীর এ অবস্থার জন্য ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি যে চিকিৎসক অপারেশন করেছেন তাদের দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।

স্বজনরা জানান, মির্জা খাতুনের জরায়ুর সমস্যা দেখা দিলে নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে ১৬ আগস্ট রাতে স্থানীয় সিটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। পরদিন মির্জা খাতুনের জরায়ুর (ভ্যাজাইনাল হিসট্রেকটমি) অপারেশন হয়। অপারেশন করেন অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট ডা. মো. ইফতেখার আল—সামস ইমন এবং অ্যানেসথেসিয়া দেন মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. নুসরাত নওরীন নাহার সেতু।

মির্জা খাতুনের ছেলে মিরাজ অভিযোগ করে বলেন, অপারেশনের পর ২১ আগস্ট মাকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়। ক-দিন পর মায়ের পেট ফুলে যায় এবং ক্ষতস্থানে জ্বালা—পোড়া করতে থাকে। ২৬ আগস্ট গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মাকে সিটি ক্লিনিকে নিয়ে যাই। সেখানে ডা. ইমন এবং ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আমার মায়ের গ্যাসের সমস্যা হয়েছে বলে কিছু ওষুধ লিখে চলে যেতে বলেন। সোমবার সন্ধ্যার পর আমার মায়ের অবস্থার অবনতি হলে আবারো তাকে সিটি ক্লিনিকে নিলে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেয় না। পরে মাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি।

chu-(2).jpg

অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার গাইনির মতো জটিল (ভ্যাজাইনাল হিসট্রেকটমি) অপারেশন আর মেডিকেল কর্মকর্তা স্পাইনাল (অ্যানেসথেসিয়া) দেওয়া সঠিক হয়েছে কি না জানতে চাইলে সিটি ক্লিনিকের মালিক আসগর আলী বলেন, তারা (ডাক্তার) তো অহরহ অপারেশন করছেন। তার অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্টের পিজিটি ডিগ্রি আছে এ কারণে তিনি অপারেশন করতে পারবেন।

তবে ক্লিনিক মালিকের এমন মন্তব্যের বিরোধিতা করে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি ডা. মার্টিন হীরক চৌধুরী বলেন, গাইনির মতো জটিল অপারেশন (ভ্যাজাইনাল হিসট্রেকটমি) একজন অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট কোনোভাবে করতে পারেন না। আর পিজিটি যে ডিগ্রির কথা বলা হচ্ছে সেটিও তিনি লিখে আরেকটি অন্যায় করেছেন।

ডা. মার্টিন হীরক চৌধুরী আরও বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে স্পষ্ট উল্লেখ আছে—বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নিবন্ধন ব্যতীত চিকিৎসাকার্য পরিচালনা করিতেছেন এবং কোনো নিবন্ধিত চিকিৎসক/দন্ত চিকিৎসক তাদের সাইনবোর্ডে, প্রেসক্রিপশন প্যাডে বা ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে পিজিটি, বিএইচএস, এফসিপিএস (পার্ট—১), (পার্ট—২), এমডি (ইনকোর্স) ইত্যাদি ব্যবহার করছেন, যা কোনো স্বীকৃত অতিরিক্ত, চিকিৎসা শিক্ষাগত যোগ্যতা নয়। এছাড়া স্বীকৃত পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি না থাকা স্বত্বেও কেউ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সার্জারি বিশেষজ্ঞ, গাইনি বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি ব্যবহার করলে তা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের পরিপন্থি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ধারা—২২(২) কোনো ব্যক্তি উপধারা (১) এর বিধান লঙ্ঘন করলে উক্ত লঙ্ঘন হবে একটি অপরাধ এবং এর জন্য তিনি ৩ (তিন) বছর কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন জাগো নিউজকে বলেন, মির্জা খাতুন নামে এক রোগীকে সোমবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার জরায়ুর (ভ্যাজাইনাল হিসট্রেকটমি) অপারেশন হয়েছিল। আমাদের এখানে ভর্তির পর তার কিছু পরীক্ষা করাই। পরীক্ষায় মির্জা খাতুনের শরীরের ভেতর পানি অথবা রক্তের মতো দেখা যাচ্ছে এবং তার নাড়ী পেঁচিয়ে আছে। তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।

ভুল চিকিৎসার বিষয়ে বিষয়ে জানতে ডা. ইফতেখার আল—সামস ইমনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

হুসাইন মালিক/এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।