সেতুই এখন নৌপথের দুঃখ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০১:১৭ পিএম, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নেত্রকোনার বারহাট্টায় সাহতা এলাকায় ধনাই নদে নির্মিত একটি সেতু ওই নৌপথের জন্য দুঃখের কারণে হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে নদ থেকে কম উচ্চতায় সেতু নির্মাণ করায় এই দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে সেতুর গার্ডারের নিচ পর্যন্ত পানি ছুঁয়ে যাওয়ার কারণে ব্যাহত হচ্ছে নৌচলাচল।

এছাড়া গত বর্ষায় ট্রলারের ধাক্কায় সেতুর পিলার ভেঙে যাওয়ায় ভারী যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে সড়ক ও নৌ যোগাযোগ উভয় পথেই বিপাকে এলাকাবাসী।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নেত্রকোনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার বারহাট্টার সাহতা বাজারসংলগ্ন ধনাই নদের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় এলজিইডি। ৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ দশমিক ৭ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের জন্য গত ২০১১ সালের আগস্টে এনটিটি-এমএআর (জেবি) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। নির্মাণের সময়কাল দেড় বছর ধরা থাকলেও গত ২০১৪ সালের জুন মাসে সেতুর কাজ শেষ হয়। পরে তা চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। কিন্তু সেতুটি নিচু হওয়ায় নৌচলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়।

গত জুলাই মাসে একটি বালুবাহী ট্রলারের ধাক্কায় সেতুর গার্ডার ও তিনটি পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। এরপর থেকে সেতুটির ওপর দিয়ে ভারী যানচলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি সেতুর ওপর দিয়ে ট্রাক, লরি, কার্ভাডভ্যান যাতে চলাচল করতে না পারে সেজন্য ইটের গাঁথুনি দিয়ে পথ রোধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে সেতুটি দিয়ে কেবল সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, রিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে।

বারহাট্টা উপজেলার সাহতা গ্রামের জালাল মিয়া বলেন, সেতুটি সঠিক উচ্চতায় নির্মাণ করা হয়নি। নির্মাণের সময় এলাকার লোকজন আরেকটু উঁচু করে সেতুটি নির্মাণের দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জনগণের দাবি উপেক্ষা করে তাদের সেতু নির্মাণ করায় এখন দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া সেতু নির্মাণেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে আট বছরেই সেতুটির কয়েকটি পিলার ভেঙে অকেজো হয়ে পড়েছে।

বারহাট্টার বাসিন্দা সালাহ উদ্দিন খান বলেন, সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে যারা ভুল নকশায় সেতুটি নির্মাণ করেছে তাদের শাস্তি হওয়া দরকার। প্রায় আড়াই কোটি টাকার সেতুতে এখন সড়ক ও নদীপথ দুটিই অচল। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

সাহতা বাজারের বালু ব্যবসায়ী সোহেল খান বলেন, নেত্রকোনা শহরের ইসলামপুর মোড় এলাকা থেকে সরাসরি বারহাট্টা যাতায়াতের জন্য সাহতা সেতুটি নির্মাণের জন্য আমাদের প্রাণের দাবি ছিল। কিন্তু ভুল নকশায় নিচু সেতু নির্মাণ করায় এখন অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। শুরু থেকেই আমরা উচ্চতা বাড়িয়ে সেতু নির্মাণের দাবিতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দিলেও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ তা মানতে নারাজ ছিল। তখন তারা বলেছিল, পানির স্তর বাড়লেও নৌ চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না। এখন নদীতে সামান্য পানি বাড়লেই ব্রিজ ছুঁয়ে যায়। ট্রলারসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি সেতুর নিচ দিয়ে ছোট নৌকা চলাচল করতেও কষ্ট হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম শেখ বলেন, সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে তিন টনের বেশি ভারী যানচলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞের রিপোর্টের ভিত্তিতে পিলার ও সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এইচ এম কামাল/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।