অক্টোবরে মোংলা-খুলনা রুটে চলবে ট্রেন

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মোংলা (বাগেরহাট)
প্রকাশিত: ০৯:৩৫ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলার সঙ্গে আগামী অক্টোবরে চালু হতে যাচ্ছে রেলযোগাযোগ। শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মোংলা-খুলনা রেললাইন পরিদর্শনে গিয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, মোংলা-খুলনা রেলপথের নির্মাণ কাজ এখন একেবারেই শেষের পথে। আগামী অক্টোবরের শেষের দিকে এ রেলপথ (খুলনার ফুলতলা রেলস্টেশন থেকে মোংলা বন্দরের দিগরাজ) দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরুর পরিকল্পনা নিয়েই কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এরইমধ্য এ রেলপথের ৯৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি মাত্র দুই শতাংশ রেলপথ ও সামান্য ফিনিশিংয়ের কাজ চলমান আছে। এ পথে রেল চলাচল শুরু হলে মোংলা বন্দরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

প্রকল্প পরিচালক জানান, ট্রানজিট সুবিধার আওতায় মোংলা বন্দর থেকে পাশের দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে পণ্য পরিবহন সাশ্রয় ও সহজ করতে খুলনার ফুলতলা রেলস্টেশন থেকে মোংলা বন্দরের জেটি পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। প্রকল্প মেয়াদের কাজ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মোংলা-খুলনা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রথম দফায় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকায়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।

Rail-1.jpg

তবে দ্বিতীয় দফা সংশোধনের পর সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। সেই সঙ্গে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টুব্রো রূপসা নদীর ওপর রেল সেতুর নির্মাণ কাজ করে। বাকি কাজ করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।

এ প্রকল্পটির কাজ তিনটি ভাগে বিভক্ত। এরমধ্যে রয়েছে রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণ, মূল রেললাইন স্থাপন ও টেলিকমিউনিকেশন এবং সিগন্যালিং স্থাপন। শুরু থেকেই প্রকল্পটি নানা ধরনের বাঁধার মুখে পড়ে। তিন বছর মেয়াদের কাজটির জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দিতে সময় লাগে দুই বছর। আর এ ধীর গতির কারণে তিন বছর মেয়াদের প্রকল্পটি ১হাজার ৭২১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৪হাজার ২৬০ কোটি টাকায়। দুই দফায় প্রকল্প সংশোধনের কারণে ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। তবে তৃতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়েনি বলে দাবি সংশ্লিষ্ট এ কর্মকর্তার।

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী মোস্তাক আহমেদ মিঠু বলেন, বর্তমান সরকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের জন্য যেমন পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে। তেমনি রেলযোগাযোগের ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরের সঙ্গে রেলপথ নির্মাণ করেছে। এতে বিভিন্ন পণ্য যেমন কম খরচে মোংলা বন্দর থেকে পরিবহন করা যাবে, তেমনি মোংলা বন্দর দিয়ে রপ্তানিও করা যাবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও গতি বেড়ে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পাবে।

Rail-1.jpg

বাগেরহাট-৩ আসনের (মোংলা-রামপাল) সংসদ সদস্য ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় আন্তরিক। এ রেললাইনটি মোংলা বন্দর পর্যন্ত সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে মোংলা বন্দরের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে মোংলা বন্দরের পণ্য পরিবহনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে দেশের সাদা সোনাখ্যাত চিংড়ি রপ্তানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এবার সেই জটিলতার নিরসন হবে।

উপমন্ত্রী আরও বলেন, এ রেল চালু হওয়ার সুবাদে দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীদের ক্ষেত্রে সুন্দরবন ভ্রমণ সহজ ও আনন্দদায়ক হবে। এতে সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমনও বৃদ্ধি পাবে। সেইসঙ্গে যেমন রেলের আয় বাড়বে তেমন বনবি ভাগের আয় বাড়বে।

আবু হোসাইন সুমন/এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।