আশ্বিনা আমের মণ ১৫ হাজার, তবুও লোকসানে চাষিরা
সম্প্রতি জিআই সনদ (ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি) প্রাপ্ত আশ্বিনা আম বিক্রি হচ্ছে ১২-১৫ হাজার টাকা মণ। এতেও উৎপাদন খরচ উঠছে না বলে দাবি চাষিদের।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটের পাইকারি আম বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র ১০-১৫ ভ্যান আম নেমেছে। তবুও তেমন ক্রেতা নেই। কারণ দাম বেশ কড়া। ভ্যানে আম সাজিয়ে বসে আছেন চাষিরা।
ভোলাহাট উপজেলা থেকে কানসাটে আম বিক্রি করতে এসেছিলেন মো. বাচ্চু আলি। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমার এবছর প্রায় ৭০০ মণ আশ্বিনা আম ছিল। দুই মাস আগে ৭০০-৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছিলাম ২০০ মণ আম। এতে উৎপাদন খরচ উঠছিল না আমার। তাই আমগুলো ক্ষোভে রেখে দিয়েছিলাম। এখন এগুলোই বাজারে বিক্রি করছি। তবে এ দামে বিক্রি করেও উৎপাদন খরচ উঠছে না আমার।
বাচ্চু আরও বলেন, কারণ আমার বাগানে তো ৪০০ মণ আমের মধ্যে ২০০ মণের বেশি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমার বাগানে মাত্র ৪০ মণ আম আছে।

উপজেলার টিকরি এলাকার আম চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, ৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি আম বাগান কিনেছিলাম। আশা ছিল ৫০০ মণ আম হবে। গাছে আমও ছিল। কিন্তু দাম না থাকায় আম বিক্রি করিনি। এখন দেখছি বেশিরভাগ আমই নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আমাদের এ বছর অনেক লোকসান হবে। আজ বাজারে এনেছিলাম, বিক্রি করলাম ১৩ হাজার টাকা মণ।
শফিকুল নামে আরও এক চাষি বলেন, দুদিন আগেও আশ্বিনা আম বিক্রি করলাম ১৫ হাজার টাকা মণ। তবে আজ দাম একটু কম। তবে সব থেকে ভালো আম বিক্রি হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা মণ।
গোমস্তাপুর উপজেলা থেকে কানসাটে আম বিক্রি করতে এসেছিলেন মো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এখন আমের মৌসুম প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ সময় আমের দাম থাকার কথা ২০-২৫ হাজার টাকা মণ। কিন্তু হচ্ছে না। আমের তেমন দাম নেই। এ দামে আম বিক্রি করে খরচ উঠবে না আমাদের।
হামিদুর নামে আরও এক আম চাষি বলেন, এখন আমের দাম ভালো কিন্তু আম তো নেই। আম না থাকলে দাম দিয়ে কী করবো। এবার আমার তিন লাখ টাকার বেশি লোকসান হবে। কারণ গত বছরের তুলনায় বেড়েছে কীটনাশকের দাম। কিন্তু আমের দাম তো বাড়েনি। বরং গতবারের চেয়ে এবার আমের দাম অনেক কম। এতে লোকসান হচ্ছে আমাদের।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা আশ্বিনা আমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই বিভিন্ন বারমাসি আম চাষ দিন দিন বাড়ছে। তবে আশা করা যাচ্ছে আগামী বছর থেকে এমনটা আর হবে না। বর্তমানে আমের দাম ভালো আছে। নাবি জাতের আম যারা চাষ করেছেন তারা এখন ভালো দাম পাচ্ছেন।

কানসাট আম বাজারের পাশেই আড়ত আছে মো. মামুন আলীর। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এখন আম অনেক কম আসছে। তাই আড়তদার ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। আম যেমন কমেছে তেমনি কমেছে ব্যবসাও। যেহেতু আমের দাম বেশি তাই ব্যবসায় পুঁজি বেশি লাগছে।
তিন দিন আগে আমের ব্যবসা শেষ করেছেন আড়তদার শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, পুরো সিজনে প্রায় দুই কোটি টাকার আমের ব্যবসা করেছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এখন হিসাব করতে গিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এজন্য দ্রুত আমের ব্যবসা ছেড়ে দোকান দেবো ভাবছি।
রায়হান আলী ফেনি থেকে কানসাট এসেছেন আম কিনতে। সেখানে দোকান আছে তার। তবে তিনি জানান, আশ্বিনা আম কিনবেন না। কারণ এই আম একটু টক তাই তিনি নাবি জাতের আম খুঁজছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান আছে। এবছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার টন।
সোহান মাহমুদ/এসজে/এমএস