চরমোনাই পির
রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে জাতীয় সরকারের অধীন নির্বাচন দিন

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দেশে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করে চরমোনাই পির মুফতি রেজাউল করিম বলেছেন, রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিন।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কক্সবাজার পাবলিক হল ময়দানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা কর্তৃক আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সমাবেশে চরমোনাই পির বলেন, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাস-দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গঠন করা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হলেও সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়নি বরং আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণে আজ দেশ নাজুক পরিস্থিতির সম্মুখীন। ক্ষমতাসীনরা সন্ত্রাস আর লুটপাটে ব্যস্ত। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে, ব্যাংক খাত দেউলিয়া হওয়ার পথে।
তিনি আরও বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সবকিছু সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে মুফতি রেজাউল করিম বলেন, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে ১৭৩ দিন হরতাল-অবরোধ করে দেশ অচল করে দিয়েছিলেন। সেই কথা কি ভুলে গেছেন? এখন সংবিধানের দোহাই দিয়ে দেশকে ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। মনে রাখা উচিত মানুষের কল্যাণের জন্য সংবিধান, সংবিধানের জন্য মানুষ নয়। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি। বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
সমাবেশে প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, জাতীয় সরকার বা নিরপেক্ষ সরকার যে নামেই হোক একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে দেশ অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে প্রহসনের নির্বাচনের কারণেই বিদেশিরা আমাদের দেশে হস্তক্ষেপ করার সাহস পাচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অধীনে হবে না, হতে দেওয়া হবে না। সরকার সসম্মানে পদত্যাগ না করলে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আন্দোলনের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি জান্নাতুল ইসলাম বলেন, রক্তে কেনা স্বাধীনতা অর্থবহ করতে অনতিবিলম্বে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রশাসনকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশাহারা। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা আজ সরাসরি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এসব সিন্ডিকেটের কাছে সাধারণ মানুষ আজ অসহায়।
সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান ও কক্সবাজারের স্থানীয় দাবিগুলো উপস্থাপন করে তা বাস্তবায়নের দাবি জানান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি সম্পাদক মাওলানা ফরিদুল আলম এবং জয়েন্ট সেক্রেটারি প্রভাষক রাশেদ আনোয়ারের সঞ্চালনায় জেলা সহ-সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ শোয়াইবের উদ্বোধনী বক্তব্যে সমাবেশ শুরু হয়।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারি আল মুহাম্মাদ ইকবাল, জাতীয় ওলামা মশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য আল্লামা ফরিদ উদ্দীন আল মোবারক, আন্দোলনের জেলা উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ আমিন, জাতীয় শিক্ষক ফোরামের জেলা সভাপতি আমিরুল ইসলাম, শ্রমিক আন্দোলন জেলা সভাপতি হাবিবুর রহমান কন্ট্রাক্টর, ইসলামী যুব আন্দোলনের জেলা সভাপতি নুরুল ইসলাম আজিজী, ছাত্র আন্দোলনের জেলা সভাপতি মুহাম্মদ জুনাইদুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা নেতাকর্মীরা।
সায়ীদ আলমগীর/বিএ