কাগজ-কলমে শিক্ষার্থী ৭২, শ্রেণিকক্ষে নেই কেউ
বিদ্যালয়ের কাগজ-কলমে মোট শিক্ষার্থী ৭২ জন। অথচ তারা কেউ আসে না। কেন আসে না, তা জানেন না বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সুপারিন্টেনডেন্ট আব্দুল রাজ্জাক। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে উঁকি দিয়েও কোনো শিক্ষার্থীর দেখা মিললো না। তবে ২২ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ পৌর এলাকায় অবস্থিত জাফর ইকবাল কারিগরি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।
বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারীকে দেখা যায়। বিদ্যালয়ের সামনে একটি জাতীয় পতাকা উড়ছিল। মাঠে সবুজ ঘাস, কিন্তু বিদ্যালয়ে কোনো কোলাহল নেই। বিদ্যালয়টির সবগুলো শ্রেণিকক্ষই শিক্ষার্থী শূন্য। বেঞ্চগুলো এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। শুধু অফিস কক্ষে কয়েকজন শিক্ষক গালগল্পে মেতে উঠেছেন।
জানা যায়, নারী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ২০০১ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। এরপর ২০০৩ সালে এমপিওভুক্ত হয়। এরপর থেকেই নামমাত্র শিক্ষার্থী দিয়ে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি।

বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী নেই কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটার অপারেটর মিজানুর রহমান বলেন, ভারপ্রাপ্ত সুপারিন্টেনডেন্ট সময়মতো স্কুলে আসেন না। শুধু তাই না, শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসে কি না সেটাও খোঁজ-খবর নেন না। এজন্য শিক্ষার্থীর উপস্থিতি শূন্যের কোঠায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সহকারী শিক্ষক জানান, স্কুলে মোট শিক্ষার্থী ৭২ জন। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে না। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন ১৪ জন আর কর্মচারী ছয়জন। তবে শিক্ষার্থীরা কী কারণে স্কুলে আসে না তা তিনি জানেন না।
স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়ে বাস্তবে কোনো শিক্ষার্থী না থাকলেও কাগজ-কলমে ঠিকই দেখানো হয়। কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থী ছাড়াই চলছে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। তারা আরও জানান, বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান করানো হয় না। এ কারণে তারা মেয়েদের ওই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করান না। তবে শিক্ষার্থী শূন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কীভাবে বেতন-ভাতা পান সেটা তাদের প্রশ্ন।
বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী শূন্যের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত সুপারিন্টেনডেন্ট আব্দুল রাজ্জাকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষার্থী কেন নেই, সেটা বলতে পারবো না। তবে আমরা শিক্ষক-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছি।

বিদ্যালয়ের সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জুয়েল জাগো নিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধানের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ পেয়েছি। সেটা সামনের মিটিংয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব।
বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা সুপারিন্টেনডেন্ট জাফর ইকবাল জাগো নিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ে কাগজ-কলমে কিছু শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে নেই, এমন বিষয়টি আমার জানা নেই। ২০০১ সালে ওই প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করলেও দুই বছর পরেই এমপিও হয়েছিল।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল সালাম জাগো নিউজকে বলেন, এ উপজেলায় আমি নতুন যোগদান করেছি। তবে এমন অভিযোগ পেলে অবশ্যই খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজি সলিম উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না থাকার কোনো সুযোগ নেই। তবে ওই বিদ্যালয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি বাস্তবে কোনো শিক্ষার্থী না থাকে তাহলে অবশ্যই সেটা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এম এ মালেক/এমআরআর/এমএস