মাদরাসায় জেলা পরিষদের বরাদ্দ, কাজ না করেই টাকা ভাগাভাগি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৭:৪৩ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে একটি মাদরাসায় জেলা পরিষদের বরাদ্দ টাকার কাজ না করেই ভাগাভাগি করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ করেছে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের আমগঞ্জ কাজী তোফাজ্জল হোসেন দ্বিমুখী আলিম মাদরাসার সেমিপাকা ভবন নির্মাণের জন্য ৯ লাখ টাকার বরাদ্দ দেয় জেলা পরিষদ। যার বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় কাজী ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আ ন ম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান মণ্ডল ও বামনডাঙা ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি রেজাউল হক রেজা।

তারা শর্ত জুড়ে দেন বরাদ্দ ৯ লাখ হলেও দেওয়া হবে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অধ্যক্ষকে নিজে কাজ করিয়ে নিতে হবে এবং সই করতে হবে সব কাগজপত্রে। টাকা ভাগাভাগির বিষয়টি আঁচ করতে পেরে অধ্যক্ষ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজটি করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তবে শর্ত না মানলে কাজটি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন জাতীয় পার্টির ওই দুই নেতা। এমন অবস্থায় অধ্যক্ষ মাদরাসার কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের বেঁধে দেওয়া শর্ত মেনে নেন। শর্ত মানায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজী রিপন এবং জাপার ওই দুই নেতা সব কাগজপত্রে অধ্যক্ষের সই নিয়ে তার হাতে নগদ ১ লাখ ৬০ হাজার ও ২ লাখ টাকার একটি চেক দেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, গত ৯ জুন স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী মাদরাসা ভবনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন এমন একটি ফলক রয়েছে। কিন্তু মাদরাসার ভেতরে টিনশেডের পরিত্যক্ত একটি ভবনের সামনে কয়েক হাজার ইট ছাড়া কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।

এদিকে, বরাদ্দের টাকা ভাগাভাগির বিষয়টি অস্বীকার করে উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান মণ্ডল বলেন, এই বরাদ্দের কাজের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কোনো নেতাকর্মীর সম্পৃক্তা নেই। তবে এমপি যেহেতু আমাদের দলের সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এটা জানার চেষ্টা করেছে। আমি প্রিন্সিপালের সঙ্গেও এটার বিষয়ে জানার চেষ্টা করেছি। কোনো একসময় ঠিকাদার সেখানে আসে। তারা নিজে কাজ করবে না, প্রিন্সিপালকে দিয়ে করাবে। সেই মর্মে একটা চেকও দেয়। কিন্তু এটার সঙ্গে জাতীয় পার্টির লোকজনের ভাগাভাগির কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার একটি চেক দেওয়া হয়েছে। সেখানে কথা ছিল আরও কিছু টাকা দেবে। তার আগেই এমপি সেটা উদ্বোধন করেছেন।

আমগঞ্জ কাজী তোফাজ্জল হোসেন দ্বিমুখী আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ আ ন ম মোজাম্মেল হক বলেন, বরাদ্দের বিষয়টি আমি আগে জানতাম না। ঠিকাদারকে সঙ্গে নিয়ে জাপা নেতা আব্দুল মান্নান মণ্ডল ও রেজাউল হক রেজা আমার কাছে এসেছিল। তারা বলেছিল, ঠিকাদার কাজ করবে না। ৯ লাখের মধ্যে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার বেশি দেওয়া হবে না। এতে রাজি না হলে অন্য প্রতিষ্ঠানকে ওই বরাদ্দ দেওয়া হবে। আমরাও ভাবলাম ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’। ঠিকাদার ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছে। দুই লাখ টাকার একটা চেক দিয়েছে। সেই অ্যাকাউন্টেও আবার টাকা নেই। এখন পর্যন্ত খালি ঘোরাচ্ছে ঠিকাদার।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কাজী রিপন বলেন, আমরা কাজ করি না। শুধু মালামাল সাপ্লাই দিই। তবে বরাদ্দ ৯ লাখ হলেও ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার অংশীদারের সঙ্গে কথা বলার পর জানাবেন বলে ফোন কেটে দেন।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মমিন মণ্ডল বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাইবান্ধা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, মাদরাসায় বরাদ্দের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, শিগগির একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেবো। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। ইনশাআল্লাহ, মাদরাসার সেমিপাকা বিল্ডিংয়ের কাজ হবে।

শামীম সরকার শাহীন/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।