মেয়ের সামনে স্ত্রীকে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা
চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকায় নয়ন তারা (৩৮) নামে এক গৃহবধূকে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। এ সময় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস টুনি মাকে রক্ষা করতে এলে তাকেও রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে সুমিরদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নয়ন তারা মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের আনছার আলীর মেয়ে।
জানা যায়, ১৮ বছর আগে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সুমিরদিয়া গ্রামের মৃত আনছার মন্ডলের ছেলে আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রী নয়ন তারাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন স্বামী আনোয়ার হোসেন। সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ নয়ন তারার মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে নেয়। স্বামী আনোয়ার হোসেন ঘটনার পরপরই গা ঢাকা দিয়েছেন।
প্রতিবেশীরা জানান, বিছানা ও ঘরের মেঝে রক্তাক্ত হয়ে যায়। নয়ন তারার মাথার ঘিলু পর্যন্ত বেরিয়ে ছিটিয়ে পড়ে। মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সোহরাব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, টুনির মাথায় রড জাতীয় বস্তুর আঘাতের চিহ্ন আছে। মাথায় ১২-১৫টা সেলাই গেছে। সে আশঙ্কা মুক্ত নয়। তাকে সদর হাসপাতালে নারী সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি রেখেছি। তার চিকিৎসা চলমান।
আহত টুনি বলেন, ‘বাবা ৯ মাস ধরে আমাদের কোনো খরচ দেন না। আমরা নানিবাড়িতে ছিলাম। আমার নানার আর্থিক অবস্থা অতটা ভালো না। মা আমাদের খুব কষ্ট করে চালান। আমার আর ছোট ভাইয়ের পড়াশোনাও চালান মা। মায়ের শখ তার ছেলে হুজুর হবে এবং আমাকেও এসএসসি পর্যন্ত পড়াবেন। আমার পড়াশোনা গ্যাপ যাচ্ছে তাই আজ বাড়িতে এসেছি। মা বলছিলেন আজকে যেতে হবে না কালকে যাই।’
‘আমরা যদি কালকে আসতাম তাহলে আমার মা বেঁচে থাকতো’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন টুনি।
তিনি আরও বলেন, মাগরিবের সময় আমরা নানিবাড়ি থেকে এসেছি। তারপর রাতে খাওয়া দাওয়া করে শোবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় বাবা বাড়িতে আসে। বাবা রুমে এসেই মাকে বলে তুই আমার বাড়ি এসেছিস কেন? মা উত্তরে বলেন আমার ছেলে মেয়ের অধিকারে আমি এসেছি। এ সময় বাবা মাকে গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে মাকে রড দিয়ে মাথায় বাড়ি দেয়। তিনি খাটের ওপর পড়ে যান। ঠেকাতে গেলে আমাকেও ধাক্কা দেন বাবা। আবার ঠেকাতে গেলে আমাকে রড দিয়ে বাড়ি দেন। আমি ফ্লোরের ওপর পড়ে যাই। পরে আমাকে ঠেলা মেরে আমার বাবা বেরিয়ে চলে যান। আমি রক্তাক্ত অবস্থায় উঠে মায়ের কাছে যাই। আমি মায়ের কাছে পৌঁছানোর পরও মা তিনবার নিঃশ্বাস নিয়ে তিনি হা করের। এরপর আর কথা বলছিলেন না। চিল্লাচিল্লিতে চাচিরাসহ লোকজন আমাদের বাড়িতে আসেন।’
টুনি আরও বলেন, ‘আনোয়ার যে আমার বাপ, এটা বলতেই ঘৃণা করে। কেউ যদি আমাকে পরিচয় জানতে চাই আমি আমার দাদার পরিচয় দিই। আমার বাবা একটা বেয়াদব। আমার সঙ্গেও বাবা খারাপ ব্যবহার করেন। আমার দিকে খারাপ নজরে তাকান এবং আমার সঙ্গে খারাপ ভাষায় কথা বলেন।’
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পরকীয়া সন্দেহে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা ছিল না। স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামী আনোয়ার হোসেন গা ঢাকা দিয়েছেন। আমরা তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন জাগো নিউজকে বলেন, নিহত নয়ন তারাকে আমরা মৃত অবস্থায় পাই। তার মেয়েকে আহত অবস্থায় পাই। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, দীর্ঘদিন যাবত নয়ন তারার সঙ্গে তার স্বামীর পারিবারিক কলহ ছিল। পরিবারে অশান্তি বিরাজ করছিল। এরই ফলশ্রুতিতে আজ রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে নয়ন তারাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সুরতহাল করে মরদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর অভিযুক্ত আনোয়ার দ্রুত পালিয়ে যান। তাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
হুসাইন মালিক/এসজে/এমএস