নওগাঁয় ডুবে থাকা ১০ গ্রামে সুপেয় পানি-খাবার সংকট

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৯:২৪ এএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নওগাঁর ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীতে পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার চার উপজেলার সাত পয়েন্ট ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানি ও খাবারের সংকট।

জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীতে পানি বেড়ে জেলার রানীনগর, আত্রাই, মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলার বেড়িবাঁধের সাত পয়েন্ট এবং বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি অংশ ভেঙে বন্যার পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। তলিয়ে গেছে কয়েকশ বিঘা জমির আউশ ও আমন ধানক্ষেত। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

jagonews24

এছাড়া রানীনগর-আত্রাইয়ের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে দুদিন থেকে সড়কপথে যোগাযোগ বন্ধ। পানিবন্দিদের মধ্যে সরকারি চাল, ডাল ও শুকনা খাবার বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

বৃহস্পতিবার রানীনগর ও আত্রাই উপজেলার বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ফলে বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশে হু হু করে পানি ঢুকছে। পানি ঢুকে ঘরের আসবাবপত্রসহ আরও অনেক কিছু ডুবে গেছে। গবাদিপশু নিয়ে কেউ উঁচু স্থানে, কেউ বা ঘরের মধ্যে চৌকির ওপর পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করছেন। রান্নার চুলা ডুবে যাওয়ায় খাওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই বন্যাকবলিতদের এসব মানুষের এলাকায়। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানি ও খাবারের সংকট। জরুরি প্রয়োজনে একবুক পানি ভেঙে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

jagonews24

আত্রাই উপজেলার মালঞ্চি গ্রামের আব্দুল মান্নান বলেন, চারদিন আগে ছোট যমুনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। ঘরের মধ্যেও এক হাঁটু পানি। চারদিন থেকে পানিবন্দি অবস্থা। গরু-ছাগল, মুরগিসহ এখন বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছি। গবাদিপশুর খাবার সংকট। খাবার এবং সুপেয় পানির চরম সংকটে পড়েছি। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেননি।

একই গ্রামে গৃহবধূ নিলুফা বেগম বলেন, ঘর পানিতে ডুবে গেছে। মানুষের বাড়িতে গিয়ে রাতযাপন করতে হচ্ছে। বাচ্চাদের নিয়ে বিপদে আছি। খাবারের সমস্যা। কী বলবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা বাঁধের একটা স্থায়ী সমাধান চাই। কয়েক বছর পরপর বাঁধ ভেঙে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

jagonews24

নান্দাইবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, আত্রাই নদীতে পানির প্রচুর চাপ। বুধবার সকাল থেকে রানীনগর-আত্রাইয়ের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের সড়কে পানি যেতে শুরু করে। আমরা গ্রামবাসী মিলে রক্ষার চেষ্টা করেছিলাম। বেলা ১১টার দিকে অবশেষে বাঁধ ভেঙে যায়। এ রাস্তার প্রায় ৫০ ফুট জায়গা ভেঙে ধসে যায়। এতে কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৬০টি মাছের পুকুর কয়েকশ বিঘা জমির আমনক্ষেত তলিয়ে যায়। এখন এ সড়ক দিয়ে কেউ আর যাতায়াত করতে পারছে না।

একই গ্রামের আল মামুন বলেন, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চলাচল করে। প্রতি বছর এ সময় আতঙ্কে থাকতে হয় আমাদের। সবাই আসে আর দেখে দেখে চলে যায়। কিন্তু জোড়ালোভাবে কেউ সড়কটি ঠিক করে না। আমাদের চোখের সামনে সড়ক ভেঙে গেলো এবং যেগুলো গ্রাম ডুবে যাওয়ার কথা না সেগুলোও ডুবে যাচ্ছে। আমরা চাই স্থায়ীভাবে দ্রুত এ সড়ক ঠিক করা হোক।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা জাগো নিউজকে বলেন, বুধবার থেকেই পানিবন্দি পরিবারের মধ্যে সরকারি চালসহ শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খাদ্য সহায়তা বিতরণে জেলা প্রশাসনের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/pic-5-20230929092417.jpg

নওগাঁ-৬ (রানীনগর-আত্রাই) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন হেলাল জাগো নিউজকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। শিগগির ক্ষতিগ্রস্ত স্থান মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হবে। ভাঙন স্থানে বালির বস্তা ফেলা হয়েছে। এছাড়া বন্যাকবলিতদের মধ্যে এরইমধ্যে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় প্রায় ৫০০ হেক্টর আউশ ও আমনের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তবে কী পরিমাণ পুকুর বা মাছের ঘের ভেসে গেছে তা এখনো নিরূপণ করতে পারেনি জেলা মৎস্য অফিস।

এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।