গরমকালের পেঁয়াজ চাষে ৫ কোটি টাকা আয়ের আশা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশিত: ০৫:৪০ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২৩

চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো বেডে বীজ রোপণ পদ্ধতিতে পেঁয়াজচাষ শুরু হয়েছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় উচ্চ ফলনশীল জাতের নাসিক রেড এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ করছেন। এ মৌসুমে ১২৮০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা।

এই জাতের পেঁয়াজের ফলন ও গুণগত মান শীতকালীন পেঁয়াজের মতোই। রোগ বালাই কম। গরম সহনশীল ও বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ফলন বৃদ্ধি পায়। অল্প সময়ে লাভজনক চাষ হওয়ায় কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। জমি থেকে পেঁয়াজ তোলার পরপরই ভুট্টার আবাদ শুরু করবেন তারা।

jagonews24

কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলার ১২০০ কৃষক এই প্রণোদনা সুবিধা পান। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে মাঠে জমি প্রস্তুতের পর কৃষকরা বেডে বীজ রোপণ করেন। বীজ বপনের পর বিচালি বিছিয়ে দিতে হয় বৃষ্টির পানিতে যেন নষ্ট বা ধুয়ে না যায়। বীজ রোপণের ৪৫ দিন পর গাছে পেঁয়াজের গুটি আসতে শুরু করে। নিয়মিত পরিচর্যায় ৯০ দিনের মাথায় পেঁয়াজ পূর্ণতা পায় এবং বাজারে বিক্রির উপযোগী হয়। এখন বাজারে উঠতে শুরু করেছে এ পেঁয়াজ।

সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় চুয়াডাঙ্গার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন এ পেঁয়াজ চাষ করেন। প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের বীজ, সার, কীটনাশক, নগদ টাকা ও প্রয়োজনীয় উপকরণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। বেডে বীজ রোপণ পদ্ধতিতে এ পেঁয়াজ চাষ করা হয়। মাটির ওপরে গাছে থোকায় থোকায় পেঁয়াজ ধরে। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে পেঁয়াজের ফলন, উৎপাদন ও মানও যথেষ্ট ভালো। দেশে এ জাতের পেঁয়াজ চাষ বৃদ্ধি করতে পারলে আমদানি নির্ভরতা হ্রাস পাবে ও সংকট দূর হবে।

jagonews24

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের কৃষক হারুন মিয়া বলেন, সরকারি সহায়তায় ১ বিঘা জমিতে অসময়ের পেঁয়াজ চাষ করেছি। খরচ কম ও ফলন ভালো। বাজারে দামও অনেক বেশি। ৩০ হাজার টাকার বেশি লাভ হবে। আগামী বছর বেশি করে এ জাতের পেঁয়াজ চাষ করবো।

আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া গ্রামের কৃষক তানহা বলেন, শীতকালে আমরা পেঁয়াজ চাষ করতাম। এখন বৈরী আবহাওয়াতেও চাষ হচ্ছে। সঠিক নিয়মে চাষ করে সফলতা পেয়েছি। বৃষ্টি ও গরমে কোনো সমস্যা হয় না। পেঁয়াজের রঙ, ঝাঁঝ ও স্বাদ অনেক ভালো। টাটকা পেঁয়াজ বলে বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছে চাহিদাও অনেক।

দামুড়হুদা পীরপুরকুল্ল গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, নাসিক রেড এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজ এ বছর প্রথম চাষ করেছি। গ্রামের অনেকে বলেছিল অসময়ে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাবে, ফলন কম হবে। কিন্তু অনেক বেশি ফলন হয়েছে। অসময়ে পেঁয়াজ চাষ করতে পারলে ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে। জমি থেকে পেঁয়াজ ওঠাতে শ্রমিকও কম লাগবে। মাটির নিচে না হওয়ায় নষ্টও কম হবে।

jagonews24

কৃষি বিভাগ বলছে, এই জাতের পেঁয়াজ চাষে প্রতি বিঘায় খরচ হয় ১৫-১৭ হাজার টাকা। খরচও তুলনামূলক কম। প্রতি বিঘায় ৫০-৬০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। প্রতি মণ পেঁয়াজের বাজার দর ২২০০ টাকা প্রায়। ১২০০ বিঘা জমি থেকে এ মৌসুমে ১২৮০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের প্রণোদনার সুযোগ সুবিধা কৃষকরা প্রথমে নিতে আগ্রহী ছিলেন না। ১২০০ কৃষককে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে চাষ করানো হয়েছে। এখন অনেক কৃষক পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমাদের কাছ থেকে বীজ নেওয়ার জন্য যোগাযোগও করছেন। কৃষকদের পেঁয়াজ ক্ষেত পরিদর্শন করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রায় ৫ কোটি টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হবে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।