ঠিকমতো খাচ্ছে না সেই হাতিশাবকটি, দেখা দিয়েছে পুষ্টিহীনতা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৭:৫০ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২৩

মায়ের সঙ্গে লোকালয়ে এসে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কক্সবাজারের ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ঠাঁই হওয়া হাতিশাবকটি চরম পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তাকে কৃত্রিম দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। তবে পরিমাণ মতো না খাওয়ায় দুর্বল হয়ে পড়েছে শাবকটি।

শাবকটি সাফারি পার্কের হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম।

তিনি জানান, হাতিশাবকটি হাসপাতালের একটি বিশেষ কক্ষে রাখা হয়েছে। সেখানে সার্বক্ষণিক দুজন দক্ষ কর্মী তার দেখাশোনা করছেন। আনুমানিক দেড় মাস বয়সী শাবকটির প্রধান খাবার মায়ের দুধ। তবে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গত এক সপ্তাহ মায়ের দুধ খেতে না পেয়ে শাবকটি অপুষ্টিতে ভুগে দুর্বল হয়ে গেছে। মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে তাকে ল্যাকটোজেন ফর্মুলা খাওয়ানো হচ্ছে। তবে, যে পরিমাণ ল্যাকটোজেন খাওয়া প্রয়োজন সে পরিমাণ সে খাচ্ছে না। এতে সে আরও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।

jagonews24

পার্কের এ কর্মকর্তার মতে, এ বয়সে শাবকটির যে পরিমাণ দৌড়ঝাঁপ করার কথা, তেমনটা সে করছে না; যা আমাদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জনের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে।

আরও পড়ুন: মা হাতির ফেলে যাওয়া শাবকের ঠাঁই হলো ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের প্রথম লক্ষ্য শাবকটিকে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা। সুস্থ হওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. জুলকার নাইন বলেন, ‘পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হাতিশাবকটি লোকালয়ে চলে আসায় সে একরকম ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে তার প্রধান সমস্যা দুর্বলতা। এছাড়া তার শরীরে কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমরা তাকে দুধের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খেতে দিচ্ছি। আঘাতের স্থানগুলো ড্রেসিং করে দিচ্ছি।’

https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/h-3-20231022195014.jpg

ডা. জুলকার আরও বলেন, ‘গতকাল শাবকটির ব্লাড প্রেসারে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সে বেশিক্ষণ হাঁটতেও পারছে না। তার শারীরিক অবস্থা বেশ জটিলই বলা চলে।’

বনবিভাগ সূত্র জানায়, গত সপ্তায় বাঁশখালীর পাইরাং বন থেকে হাতির পালে মায়ের সঙ্গে লোকালয়ে এসে কাদায় আটকা পড়ে হাতিশাবকটি। মা ও পালের অন্য সদস্যরা তাকে উদ্ধারে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে শাবকটিকে ফেলে চলে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সারাদিন পরিচর্যা করার পর সন্ধ্যায় বনে রেখে আসেন। তবে তাকে নিয়ে যায়নি হাতির পাল। পরেরদিন সে আবারও পরিচর্যা করা লোকালয়ে চলে আসে। বনবিভাগের কর্মীরা শাবকটিকে হাতির পালের কাছে ফিরিয়ে দিতে কয়েক দফা চেষ্টা করেন। তবে মানুষের সংস্পর্শে আসায় হাতির পাল শাবকটিকে না নিয়েই ফিরে যায়।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, মায়ের দুধের অভাবে শাবকটি দুর্বল হতে থাকায় তাকে গরুর দুধ খাওয়ানো হয়। সুষ্ঠু পরিচর্যায় জীবন রক্ষার আশায় বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে শাবকটিকে চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ডিএফও মামুন বলেন, ‘হাতির পালের কোনো সদস্য দলছুট হলে তাকে আর দলে ভেড়ায় না; সে সদস্যটি ছোট বা বড় হোক। এ শাবকটির বেলায়ও তেমনটি ঘটেছে। দলপ্রধানের কারণে মা হাতিও নাড়িছেঁড়া ধনকে সঙ্গে নিতে পারেনি। এমন আচরণ খুবই অমানবিক।’

সায়ীদ আলমগীর/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।