গোপনে নিয়োগ পরীক্ষা, চাকরি প্রত্যাশীদের মার খেলেন প্রধান শিক্ষক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লালমনিরহাট
প্রকাশিত: ১১:২৪ এএম, ০৬ নভেম্বর ২০২৩

লালমনিরহাট সদরে গোপনে পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগে একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে মারধর করেছেন চাকরি প্রত্যাশী ও তাদের স্বজনরা।

রোববার (৫ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের খুনিয়াগাছ এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন ওই এলাকার চার-পাঁচজন বেকার যুবককে চাকরির কথা বলে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। দীর্ঘ কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি চাকরি না দিয়ে টালবাহানা করেন। ২০২০ সালে নিয়োগের কথা বলে পত্রিকায় ভুয়া বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।

সম্প্রতি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা কর্মী, আয়া ও পরিচ্ছন্ন কর্মী পদের জন্য আবারো পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষক। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পাঁচটি পদের বিপরীতে ৪০ জন প্রার্থী আবেদন করেন। ৩১ অক্টোবর পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও সেদিন কৌশলে স্থগিত করা হয়।

কোনো চাকরি প্রার্থীকে না জানিয়ে ৫ নভেম্বর বিকেলে পাঁচ পদে অন্য পাঁচজনের নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। এ খবরে ৪০ চাকরি প্রার্থীসহ স্বজনরা বিদ্যালয়ের চারদিকে অবস্থান নেন। বিকেলে প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন আসরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদের যাওয়ার সময় তার গতিরোধ করেন। পাঁচ চাকরি প্রার্থী তার কাছে টাকা ফেরত চান। তিনি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক মোশারফের শরীরের পাঞ্জাবি টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলেন তারা।

এরপর উত্তেজিত স্থানীয় নারীরা বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করতে থাকেন।

খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান থানায় খবর দিলে থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এলাকাবাসী আনিসুর রহমান বলেন, গোপনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি তাদের আত্মীয়-স্বজনদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিষয়টি এলাকাবাসী জানার পর উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

গোপনে নিয়োগ পরীক্ষা, চাকরি প্রত্যাশীদের মার খেলেন প্রধান শিক্ষক

চাকরি প্রত্যাশী খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নুর ইসলাম বলেন, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার চাকরির জন্য প্রধান শিক্ষক মোশারফকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছি। গত পাঁচ বছর ধরে ঘুরেও তিনি আমাকে চাকরি দেননি। আজ গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করেছেন। বিষয়টি জানতে পারলে এলাকাবাসী ওই শিক্ষকের ওপর চড়াও হয় এবং টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। টাকা দিতে না পারায় একটু ধাক্কাধাক্কি হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের ক্লাস চলায় নিয়োগ পরীক্ষাটি বিকেলে নেওয়ার কথা ছিল। তাই আমি আসরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার পথে এলাকার সন্ত্রাসী ২০-২৫ জন আমার পথরোধ করে মারধর করেছে। পুলিশের সহযোগিতায় আমি হাসপাতালে ভর্তি হই।

লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং বিদ্যালয়ের সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, এ ঘটনার পরপরই উভয়পক্ষকে বসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রবিউল হাসান/এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।