সেই অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজ নেন না হিরো আলম, পড়ে আছে অবহেলায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ১২:৩৪ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০২৩

দেড়মাস ধরে পড়ে আছে হিরো আলমের সেই অ্যাম্বুলেন্সটি। উদ্বোধনের মাত্র দুই সপ্তাহ পর থেকে বগুড়া শহরের বকশিবাজারের ডিবিআর অটোমেটিভ কমপ্লিট অটো সেন্টারে অ্যাম্বুলেন্সটি ফেলে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় এটি অচল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে ঢাকা-১৭, বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে পরাজিত হোন কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। হিরো আলমকে গতবছরের ৩১ জানুয়ারি মাইক্রোবাস উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন হবিগঞ্জের শিক্ষক এম মখলিছুর রহমান। পরে হবিগঞ্জে গিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে মখলিছুর রহমানের ব্যবহত মাইক্রোবাসটি নিয়ে আসেন হিরো আলম। এরপর বাহনটি অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাড়া ফেলেন তিনি। এ ঘোষণার পরে হিরো আলমের পাশে এসে দাঁড়ায় বগুড়ার ডিবিআর অটোমেটিভ কমপ্লিট অটো সেন্টার। নিজেদের ওয়ার্কশপে নিয়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করে মাইক্রোবাসটি অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তর করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

আরও পড়ুন: ফোন করলেই মিলবে হিরো আলমের ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা

গত ৯ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার এরুলিয়াতে হিরো আলমের নিজ এলাকায় জমকালো আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ডিবিআরের ব্যবস্থাপক মিজানুর রহামন অ্যাম্বুলেন্সটি তার হাতে তুলে দেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হিরো আলম অ্যাম্বুলেন্সটি সপ্তাহে তিনদিন করে ছয়দিন বগুড়ার কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলায় দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে ব্যবহার করতে দেওয়ার ঘোষণা দেন। পরবর্তী সময় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এটি রাখা হবে বলেও জানিয়েছিলেন এ কনটেন্ট ক্রিয়েটর।

তবে উদ্বোধনের মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই যান্ত্রিক ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে ডিবিআর অটোমেটিভ কমপ্লিট অটো সেন্টারে অ্যাম্বুলেন্সটি ফেলে রেখে আসেন চালক। সেই থেকে ওই প্রতিষ্ঠানে অ্যাম্বুলেন্সটি অযত্নে পড়ে আছে। ডিবিআর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, অ্যাম্বুলেন্সের সমস্যার বিষয়ে জানতে হিরো আলমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দিচ্ছেন না।

আরও পড়ুন: উপহারের মাইক্রোবাস অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে দান করলেন হিরো আলম

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) ডিবিআর অটোমেটিভ কমপ্লিট অটো সেন্টারের ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলেন, হিরো আলম যখন গাড়িটিকে জনগণের জন্য অ্যাম্বুলেন্স বানানোর কথা জানান, তখনই গাড়িটি আমাদের ওয়ার্কশপে মেরামত করার পরিকল্পনা করি। এরপর মোবাইল ফোনে হিরো আলমকে বিষয়টি জানাই। তিনিও অনেক খুশি হয়ে আমার প্রস্তাবটি মেনে নেন।

গাড়িটি অনেক পুরোনো ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক কাজ করতে হয়েছে। ডেন্টিং ও পেইন্ট করতে হয়েছে। এখানেই মোটা অংকের খরচ লেগেছে। ভেতরের আসনগুলো অপসারণ করে অ্যাম্বুলেন্সের সিট ও অক্সিজেন সিলিন্ডার বসাতে হয়েছে। এছাড়া গাড়ির ইঞ্জিন ও চাকাও পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করে গাড়িটিকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তর করে হিরো আলমকে দেওয়া হয়।’

মিজানুর রহমান আরও বলেন, আমাদের উদ্দেশ্যে ছিল হিরো আলমের ভালো কাজের অংশীদার হওয়া। অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তরের সময় তিনি তিনি দেখেশুনে নিয়েছিলেন। হুট করে দেড়মাস আগে তার চালক এসে অ্যাম্বুলেন্স এখানে রেখে চাবি আমাদের এক ওয়ার্কারকে দিয়ে চলে যায়। আমরা অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে দেখেছি সবকিছুই ঠিক আছে। সামান্য কিছু সমস্যা থাকলে আমরা আবারও সহযোগিতা করবো। তবে হিরো আলম অ্যাম্বুলেন্স রেখে যাওয়ার পর থেকে আর কোনো আলোচনায় নেই। বারবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

আরও পড়ুন: অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তর হচ্ছে হিরো আলমের সেই গাড়ি, লাগছে না খরচ

‘সবশেষ দু-তিনদিন আগেও ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। এখন এই অ্যাম্বুলেন্স এখানে রেখে আমরা কী করবো? সামাজিক কাজের উদ্দেশ্যে ব্যয় করা আড়াই লাখ টাকাও গচ্চা গেলো’, বলেন ডিবিআর অটোমেটিভ কমপ্লিট অটো সেন্টারের ব্যবস্থাপক।

এ বিষয়ে জানতে হিরো আলমের অ্যাম্বুলেন্সের গায়ে থাকা মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সের ইঞ্জিনে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। সার্ভিসিংয়ের জন্য ডিবিআরে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে বগুড়ায় যেতে পারিনি, তাই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যোগাযোগও করা সম্ভব হয়নি। দু-তিনদিনের মধ্যেই বগুড়ায় যাবো। গিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টি দেখবো।’

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।