রেজাল্ট নিয়ে কোনো টেনশন নেই: ইসি রাশেদা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পাবনা
প্রকাশিত: ০৮:৩৩ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২৩

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানার কাছে পাবনার স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অভিযোগের বহর তুলে ধরেছেন। নৌকার প্রার্থীরা ভোট কেন্দ্রে যেতে মানা করাসহ হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে তারা অভিযোগ করেন। তবে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের আশ্বাস দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার।

তিনি বলেন, ভোট নিয়ে মানুষের অনীহা দূর করে তাদের কেন্দ্রে আনার দায়িত্ব প্রার্থীদের। আর ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের। ভোটারদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা নির্ভয়ে কেন্দ্রে আসবেন এবং নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। কেউ হুমকি দিলে বা বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যখন প্রিসাইডিং অফিসার ভোট গণনা করবেন, তখন উল্টাপাল্টা করলে তাকে ধরবেন। ভোটের ফল উল্টানোর কোনো সুযোগ নেই। রেজাল্ট নিয়ে কোনো টেনশন নেই।

শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে পাবনা জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী পাবনার ৫টি আসনের প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা হয়। সভায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেলোয়ার হোসেন, রাজশাহী বিভাগীয় উপ-মহাপুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান, পাবনার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মু. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলমসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় পাবনা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ অভিযোগ করে বলেন, জনগণের মাঝে ভোট দেওয়া নিয়ে সন্দেহ আছে। নির্বাচনকে কলুষিত করতে পারে এমন চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হয়নি। নৌকাকে যেভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, অথচ আমি সংবিধান প্রণেতা হলেও আমার নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়নি। আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ভোট সুষ্ঠু করতে প্রশাসন কাজ করছে, কিন্তু মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন কম।

পাবনা-১ আসনের তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী জয়নাল আবেদীন বলেন, এই আসনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে রেষারেষি হচ্ছে। এটা ভয়ের, আতঙ্কের। নির্বাচনের মাঠে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না দিলে আমি ভোট বর্জন করবো।

পাবনা-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হামিদ মাস্টার অভিযোগ করে বলেন, এবার জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে চায়। কিন্তু সে পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। শহর থেকে কিছু লোক এলাকায় গিয়ে ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রশাসনকে অভিযোগ দেওয়া হলে তারা শুধু শোকজ দেয়, কিন্তু ব্যবস্থা নেয় না। নৌকায় ভোট না দিলে ভাতা কার্ড কেটে দেওয়া হবে; এমন নানা হুমকি দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এজন্য প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাই।

পাবনা-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, জনগণ ভোটের মাঠেই যেতে পারবে না। নৌকার বাইরে ভোট দিলে সরকারি সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে বলে হুমকি দিচ্ছেন নৌকার সমর্থকরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে যারা কাজ করতে চাচ্ছে, তাদের বিএনপি-জামায়াত বলে পুলিশের তালিকাভুক্ত করা হবে বলেও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। জনগণকে ভোটে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। নৌকার প্রার্থীর পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে ভোটার উপস্থিতি কম হয়।

পাবনা-৩ আসনের বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) মাহবুবুর রহমান জয় চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, নিরীহ মানুষকে নৌকার কিছু সমর্থক বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছেন। অন্যান্য প্রার্থীদের ডামি হিসাবে প্রচার করছেন। এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়।

এসব অভিযোগের বিষয়ে পাবনা-৪ আসনের নৌকার প্রার্থী গালিবুর রহমান শরীফের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান মুক্তা বলেন, তার পক্ষ থেকে কোথাও কোনো ঝামেলা করা হয়নি। কাউকে বাধা দেওয়া হয়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ সঠিক নয়। সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় আছে।

পাবনা-৪ আসনের জাসদের প্রার্থী আব্দুল খালেক বলেন, মানুষ বলছে ভোট দিতে গিয়ে কি হবে, ভোট কি দিতে পারবো, ভোট দিয়ে লাভ কি। এবার তাই চ্যালেঞ্জ ভোটটাকে সুষ্ঠু করা। এজন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করা।

পাবনা-৫ আসনের এনপিপি প্রার্থী আবু দাউদ বলেন, মানুষ ভোট দিতে চায়। এজন্য নির্বাচনের মাঠ সমান চায়। নিরাপত্তা দরকার।

প্রার্থীদের এসব অভিযোগ ও দাবির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, কমিশন চায় সবাই মিলে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে। শুধু কমিশনের একার পক্ষে এটি সম্ভব নয়। সবারই সহযোগিতা দরকার। ভোট নিয়ে মানুষের অনীহা আছে। কীভাবে এই অনীহা দূর করা যায়, সে বিষয়ে প্রার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে। কারণ ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। ভোটারদের আকৃষ্ট করা প্রার্থীদের প্রধান দায়িত্ব। আর আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। যারা ভোটারদের ভয় দেখাবে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আপনারা ভোটারদের আশ্বস্ত করেন। আগে থেকেই যোগ্য বুদ্ধিমান লোক বেছে বেছে আপনাদের এজেন্ট ঠিক করেন।

তিনি আরও বলেন, রেজাল্ট প্রকাশ্য স্থানে সাঁটাতে হবে। এটা দিতে বাধ্য থাকবেন প্রিসাইডিং অফিসার। না দিলে জানাবেন। কোনো কেন্দ্রের ভোটের ফল নিয়ে সন্দেহ থাকলে অভিযোগ করবেন প্রার্থীরা। সেটি স্থগিত রাখবো। তদন্ত করবো। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আছি আমরা। অপরাধের গুরুত্ব বিচার করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর নিজেরা ব্যক্তিগত কোন্দল ও হানাহানি বন্ধ রাখেন।

আমিন ইসলাম জুয়েল/জেডএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।