বিএসএফের গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্যের বাড়িতে শোকের মাতম
যশোরের বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্য মোহাম্মদ রইস উদ্দিনের (২৫) গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ছেলে হারানোর শোকে অঝোরে কাঁদছেন মা রুমালি বেগম (৪৭)। স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা নাসরিন বেগম (২২)।
নিহত রইস উদ্দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের সাহাপাড়া এলাকার তারাপুর গ্রামের কামরুজ্জামানের ছেলে।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে তারাপুর গ্রামে নিহত রইস উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
নিহত বিজিবি সদস্যের মা রুমালি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘হঠাৎ গতকাল শুনছি আমার ছেলে আহত হয়েছে। ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। পরে সন্ধ্যায় খবর আসে আমার ছেলে মারা গেছে। গত রাত থেকে আমার চোখে ঘুম নেই। খেতে পারছি না। বাড়িতে আমার ছেলের স্ত্রী আছে। তার দুই সন্তান আছে। তারা ছোট। আমি কীভাবে বলবো তাদের বাবা পৃথিবীতে আর নেই। তাদের দেখে কষ্টে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলের মরদেহ আমি নিজ চোখে দেখে দাফন করতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন আমার ছেলের মরদেহ যেন আমার বাড়িতে দাফন করা হয়।’
আরও পড়ুন: বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্য নিহত
প্রতিবেশী আসমা বেগম বলেন, ‘রইস উদ্দিনের দুই সন্তান। রাইসা ও হাসান। রাইসার বয়স ৩ ব্ছর ও হাসানের ৪ মাস। এখন তারা কোথায় যাবে? তাদের তো কেউ রইলো না। এমনকি তাদের বাড়িঘরও ভালো না। নিঃস্ব হয়ে গেলো পরিবারটি।’
মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি মেম্বার শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘চাকরি পেয়ে বিয়ে করে ভালোই চলছিল রইস উদ্দিনের সংসার। হঠাৎ এমন মৃত্যুর খবর পেয়ে সবাই ভেঙে পড়েছেন। তার দুটি সন্তান আছে। তাদের যত্ন করার কেউ থাকলো না।’
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘সিপাহী মোহাম্মদ রইস উদ্দিনের মরদেহ এখনো ভারতের হাসপাতালেই রয়েছে। পতাকা বৈঠক হলে হয়তো মরদেহ আসবে। তবে কবে আসবে এটি এখনই বলা সম্ভব নয়।’
যশোরের বেনাপোল সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হন বিজিবি সদস্য মোহাম্মদ রইস উদ্দিন। বর্তমানে তার মরদেহ ভারতে রয়েছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিজিবি জানায়, সোমবার (২২ জানুয়ারি) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট সংলগ্ন এলাকায় ভারত থেকে আসা একদল গরু চোরাকারবারিকে সীমান্ত অতিক্রম করে আসতে দেখে বিজিবির টহল দল তাদের ‘চ্যালেঞ্জ’ করে। চোরাকারবারিরা তখন দৌড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এসময় বিজিবি টহল দলের সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইস উদ্দিন চোরাকারবারিদের ধাওয়া করতে করতে ঘন কুয়াশার কারণে দলবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। প্রাথমিকভাবে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, তিনি বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনার পরপরই উভয় দেশের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। পরে জানা যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই সৈনিক মারা যান।
সোহান মাহমুদ/এসআর/এমএস