খাবারের খোঁজে লোকালয়ে বন্যপ্রাণী, অতিষ্ঠ এলাকাবাসী
সবুজে ঘেরা পাহাড় ও কাপ্তাই হ্রদবেষ্টিত পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি। এ জেলায় বিস্তীর্ণ পাহাড় জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বসবাস। বন তাদের একমাত্র ঠিকানা। তবে বনে খাবারের অভাব দিন দিন বাড়তে থাকায়, বন্যপ্রাণীরা খাবারের খোঁজে লোকালয়ে আসতে শুরু করেছে। এতে করে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লোকালয়ে বন্যপ্রাণীদের এ তান্ডবে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
সম্প্রতি রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় বন্যহাতির তান্ডব বেড়ে গেছে বলে খবর পাওয়া যায়। প্রায়ই লোকালয়ে এসে মানুষের জানমালের ক্ষতি করছে তারা। কিছুদিন আগে বন্যহাতির আক্রমনে কাপ্তাইয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তার কয়েকদিনের ব্যবধানে হাতির আক্রমনে বেশ কয়েকজন আহত হয়। পাশাপাশি বর্তমানে কাপ্তাইয়ের বেশ কয়েকটি পাহাড়ী এলাকা সংলগ্ন বসতবাড়িতে বানরের উৎপাত বেড়ে গেছে।
কাপ্তাইয়ের বাসিন্দা কৃষক উদয়ন তঞ্চঙ্গ্যা জানান, ‘প্রায়ই বানরের ঝাঁক বাসাবাড়িতে নেমে আসে। তারা গাছের ফলমূল এবং ফসল নষ্ট করে দিচ্ছে। বানরের তান্ডবে আমরা অতিষ্ঠ।’
চন্দ্রঘোনার আরেক কৃষক সুনয়ন চাকমা বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে আমরা বাগান করি। কিন্তু বানর বাগানের শিম, পেঁপে, আতাফল, পেয়ারা, কলাসহ বিভিন্ন ফল খেয়ে নষ্ট করছে।’
এদিকে বানরের তান্ডবে অতিষ্ঠ চেচিং মারমা বলেন, ‘বানর এসে ফসল ও গাছের ফলমূল খাচ্ছে তাই নয়। তারা বাড়ির ছাদে এমন ভাবে চলাচল করছে এতে করে আমাদের বাসার টিনেরচাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

অন্যদিকে বন্যহাতি যেনো নতুন আরেক আতঙ্কের নাম। রাইখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা চিংলা উ মারমা জানান, ‘আমাদের এখানে কয়দিন পরপর বন্যহাতি নেমে আসে। তারা আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়। অনেক সময় মানুষও মেরে ফেলে। আমার চাচাতো ভাইকে বন্যহাতি আক্রমণ করে গত বছর মেরে ফেলেছিলো।’
আরেক বাসিন্দা জয় সেন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘আমার পাশের বাড়ির মেয়ে রাতে টয়লেটে যাবার জন্য বের হয়েছিলো তখনই বন্যহাতির আক্রমণে সে মারা যায়। এখন প্রায়ই হাতিরা এলাকায় ডুকে পড়ে। এতে করে আমাদের জানমালের ক্ষতি হচ্ছে।’
এদিকে বন্যপ্রাণীর লোকালয়ে এসে এমন তান্ডব চালানোর কারণ হিসেবে বন বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, বনে এখন বন্যপ্রাণী থাকার পরিবেশ নেই। বনের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমানে খাবার না পেয়ে বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে এসে তান্ডব চালাচ্ছে। বিশেষ করে বনজঙ্গলে বৃক্ষ নিধন, বনের মধ্যে নির্বিচারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া কিংবা বনের মধ্যে বসতবাড়ি নির্মাণ করার ফলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে দিন দিন জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।
এবিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান জাগো নিউজকে জানান, ‘বন্যপ্রাণী হল আমাদের দেশের সম্পদ। এদের ঠিকানা বনে, তবে এরা লোকালয়ে আসছে খাদ্য সংকটের ফলে। তবে বন্যপ্রাণীকে হত্যা করা বা আহত করা যাবেনা। বন্যপ্রাণী দ্বারা কোন মানুষ হত্যা, আহত হওয়া বা কোন ধরনের ঘর-বাড়ি বিনষ্ট হলে সরকারের পক্ষ থেকে তা পুষিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে। আমরাও কোন রকম ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পেলে তৎক্ষণাৎ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করি। বন হচ্ছে বন্যপ্রাণীদের। তাদের কোন ভাবেই ক্ষতিকরা যাবে না।’
এসএইউ/এসআইটি/এমএস