মাদরাসা সুপারের প্রতারণায় পরীক্ষা দেওয়া হলো না তিন পরীক্ষার্থীর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১:৩৫ এএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ভোলায় পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি নিয়েও এসএসসি দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি তিন শিক্ষার্থী। তাদের অভিযোগ, এসএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন, ফরম ফিলাপ ও প্রবেশপত্র বাবদ ৪ হাজার টাকা নিয়েও এগুলোর কোনোটিই করেননি মাদরাসা সুপার। এমনকি পরীক্ষার আগের দিন অন্য তিন পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র তাদের ধরিয়ে দিয়েও নিয়েছেন টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত দুটি পরীক্ষার সময় ভোলার লালমোহন কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলেছে লালমোহন উপজেলার করিমগঞ্জ ইসলামিয়া সিনিয়র আলিম মাদরাসার এসএসসি দাখিল পরীক্ষার্থী সোনিয়া আক্তার, সালমা আক্তার ও মুনতাহা। সবার মতো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও সেটি হয়নি তাদের। ওই তিন শিক্ষার্থী মাদরাসাটিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে পড়াশুনা করছে। এসএসসি দাখিল পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন ও ফরম ফিলাপ করলেও তাদের কোনোটিই হয়নি। এছাড়াও পরীক্ষার আগের দিন দুপুরে তাদের অন্য তিন পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র ধরিয়ে দিয়ে পরীক্ষার দেওয়ার কথা বলেন মাদরাসা সুপার মাওলানা রুহুল আমিন।

ভুক্তভোগী সোনিয়া আক্তার, সালমা আক্তার ও মুনতাহা জানায়, তারা ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে মাদরাসাটির নিয়মিত ছাত্রী। ২০২২ সালের দিকে নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে মাদরাসার সুপার মাওলানা রুহুল আমিন ৮শ টাকা নিয়েছেন, ২০২৩ সালের শেষের দিকে এসএসসি দাখিল পরীক্ষার ফরম ফিলাপের জন্য ২ হাজার ৫শ টাকা ও গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষার প্রবেশপত্রের জন্য ৭শ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এ সব টাকাই আত্মসাৎ করেছেন তিনি।

তারা আরও জানায়, ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রবেশপত্রের টাকা নিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও প্রবেশপত্র তাদের হাতে তুলে দেন। বিষয়টির প্রতিবাদ করলে জানানো হয় নাম ও পিতার নাম ভুল হয়েছে, রাতের মধ্যে তা ঠিক করে দেবেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে রাতে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে যান। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার কেন্দ্রে এসে মাদরাসা সুপারকে না পেয়ে কেন্দ্রের বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাকে। এমনকি ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পরীক্ষা দিতেও সকাল থেকে কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে তারা।

শিক্ষার্থী সোনিয়া আক্তারের বাবা মো. আবু তাহের ও মুনতাহার নানা মো. আলী জানান, তারা অতি দরিদ্র। ধারদেনা করে টাকা জোগাড় করে রেজিস্ট্রেশন, ফরম ফিলাপ ও প্রবেশপত্রের টাকা দিয়েছেন। কিন্তু মাদরাসা সুপারের এমন প্রতারণায় হতাশ তারা। তাই মাদরাসা সুপারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তারা।

করিমগঞ্জ ইসলামিয়া সিনিয়র আলিম মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. লোকমান হোসেন জানান, এ ঘটানার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন মাদরাসা সুপার মাওলানা রুহুল আমিন। বন্ধ করে রেখেছেন তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও। মাদরাসা সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এমন কাণ্ডের জবাব নেওয়া হবে।

লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাহবুব উল আলম জানান, ওই মাদরাসার সুপার মাওলানা রুহুল আমিন ও তার ছেলে অফিস সহকারী মো. ওবায়েতের বিরুদ্ধে লালমোহন থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তিন শিক্ষার্থীর পক্ষে মুনতাহার নানা মোহাম্মদ আলী। অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা তদন্ত শুরু করেছি। আর প্রাথমিক তদন্তে শিক্ষার্থীদের সব অভিযোগেরই আমরা সত্যতা পেয়েছি। অভিযুক্তদের আটকে চেষ্টা চলছে।

লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জুয়েল সাহা বিকাশ/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।