অরক্ষিত স্লুইস গেট, পানি ঢুকে শত বিঘা জমির ফসল নষ্ট

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পাবনা
প্রকাশিত: ০৪:৩৬ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

পাবনার সাঁথিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সেচ খালের অরক্ষিত স্লুইস গেট দিয়ে পানি ঢুকে শতাধিক বিঘা জমির পেঁয়াজ, ঢ্যাঁড়শ, ভুট্টা ও গমক্ষেত নষ্ট হয়েছে। আরও শতাধিক বিঘা জমি হুমকির মুখে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির ফলন অর্ধেকের নিচে নেমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের ক্ষেতুপাড়া, গাধুলি ও বালিয়াকান্দি গ্রামের চাষিরা জানান, গাধুলি গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এস-১৯ সেচ ক্যানেল থেকে সংযুক্ত হয়ে টি-৭ খাল তাদের ক্ষেতুপাড়া মাঠ পর্যন্ত গেছে। টি-৭ খালটি দীর্ঘ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এ খাল দিয়ে পানি সরবরাহ হতো না। কিছুদিন আগে এ খালটি ঠিকাদারের মাধ্যমে যেনতেনভাবে সংস্কার করে পাউবো কর্তৃপক্ষ। তবে খালের মাথায় স্থাপিত রেগুলেটরটির ভাঙা পাল্লা (ওপরের অংশ) মেরামত করা হয়নি। এতে টি-৭ খাল দিয়ে গত ৮-১০ দিন ধরে ক্ষেতুপাড়া, গাধুলি, বালিয়াকান্দি গ্রামের ফসলি ক্ষেতে পানি ঢুকতে শুরু করে। খালটির শেষ প্রান্তও সংস্কার করা হয়নি। ফলে খাল উপচে পানি আশপাশের উঠতি ফসলি জমিতে ঢুকে পড়েছে।

খাল উপচে পানি আশপাশের উঠতি ফসলি জমিতে ঢুকে পড়েছে

কৃষকরা জানান, তাদের মাঠের মধ্য দিয়ে যাওয়া খালে এখন কোনো পানির প্রয়োজন নেই। তবে পাউবো কর্মকর্তাদের দেখভালের অভাবে এবং উদাসীনতায় তারা ক্ষতির শিকার হলেন।

তারা অভিযোগ করে বলেন, বড় খাল থেকে তাদের মাঠের খালে পানি আসা বা বন্ধ করার জন্যই রেগুলেটর দেওয়া হয়েছে। তবে রেগুলেটরের পাল্লা মেরামত না করে পাউবো শুধু খালটি সংস্কার করেছে। একটি পাল্লা মেরামত করলে তারা এমন ক্ষতির শিকার হতেন না।

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন দেখা যায়, খালের স্লুইস গেট অরক্ষিত থাকায় পানি ঢুকছে। এতে একদিকে যেমন পানি অপচয় হচ্ছে, তেমনি ফসল নষ্ট হচ্ছে। কৃষকরা তাদের সাধ্যমতো মাটি ও বালুর বস্তা ফেলে খালের পানি ঢোকা বন্ধের চেষ্টা করছেন।

খাল উপচে পানি আশপাশের উঠতি ফসলি জমিতে ঢুকে পড়েছে

লিজ নেওয়া জমিতে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পেঁয়াজের আবাদ করেছেন আব্দুল মালেক। স্বাভাবিক ফলন হিসেবে তার অন্তত ১২০ মণ পেঁয়াজ পাওয়ার আশা ছিল। কিন্তু এখন ক্ষেতের যে অবস্থা তাতে অর্ধেক ফলনও পাওয়া যাবে না। এতে ক্ষতি হয়েছে অন্তত দুই লাখ টাকার।

কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, ‘ক্যানেল (খাল) দিয়ে পানি ঢুকে আমার চোখের সামনে দুই বিঘা জমির পেঁয়াজ ক্ষেত নষ্ট হলো। ক্ষেতে অতিরিক্ত পানি ঢোকায় জমির মাটি এখন কাদায় পরিণত হয়েছে।’

একই এলাকার কৃষক ফজর আলী জানান, তিনি আড়াই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। আশা ছিল অন্তত দেড়শ মণ পেঁয়াজ পাবেন। কিন্তু ক্ষেত পানিতে স্যাঁতসেঁতে হয়ে যাওয়ায় অর্ধেক ফলন পাবেন কি না সন্দেহ।

প্রায় এক বিঘা জমিতে ঢ্যাঁড়শ আবাদ করেছেন কৃষক মাহালাম। কিন্তু পানি চুইয়ে তার ক্ষেতের মাটি অতিরিক্ত ভিজে গেছে। এতে গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

খাল উপচে পানি আশপাশের উঠতি ফসলি জমিতে ঢুকে পড়েছে

কৃষক শাহজাহান আলী জানান, তিনি আড়াই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। ১২ হাজার টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বীজ কিনেছিলেন। কিন্তু পানি ঢুকে ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন মাটি যদি ভিজে জমাটবদ্ধ হয়ে যায় তাহলে রবিশস্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) নওফেল উদ্দিন আহমেদ বলেন, তারা বিষয়টি জেনেছেন। রেগুলেটরটির ওপরের একটি অংশ না থাকায় পানি ঢুকছে। এটি কেউ আগে জানালে খাল সংস্কারে টেন্ডারের সঙ্গেই এটি সম্পন্ন করা যেতো। এখন খুব শিগগির রেগুলেটরটি মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আমিন ইসলাম জুয়েল/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।