সমান শ্রম দিয়েও নারীর মজুরি পুরুষের অর্ধেক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী
প্রকাশিত: ১০:৫০ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৪

নারীর মর্যাদা রক্ষায় সরকারি-বেসরকারিভাবে ঘটা করে বিভিন্ন দিবস, সভা-সেমিনার করা হলেও মাঠ পর্যায়ে নেই তার কোনো প্রতিফলন। উত্তরের জেলা নীলফামারীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা কাজ করলেও রয়েছে মজুরি বৈষম্য। সব জায়গাতেই নারীদের পারিশ্রমিক পুরুষদের তুলনায় অর্ধেক বলে অভিযোগ নারীদের।

জেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, শত শত নারী-পুরুষ ফসলের পরিচর্যা, তামাকের মিলে কাজ, ধানের চারা রোপণ, মাটি কাটা, সড়ক সংস্কার, আলু উত্তোলনসহ নানা কাজ করছেন। এতে নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমানতালে শ্রম দিলেও সমান মজুরি পাচ্ছেন না। পুরুষেরা যেখানে ৫০০ টাকা মজুরি পান সেখানে নারীরা পান ২৫০ টাকা। কেউ কেউ ২০০ টাকাও পান বলে অভিযোগ রয়েছে।

সমান শ্রম দিয়েও নারীর মজুরি পুরুষের অর্ধেক

সদর উপজেলার রামগঞ্জ বাজারের সামছুল তামাক ক্রাশিং মিলে কাজ করতে আসা (ছদ্মনাম) রুপা, মেরিনা, ফেলানী, তহমিনা, বিলকিস বলেন, আমাদের দেখার কেউ নেই। এখানে সকাল আটটায় কাজে যোগ দিয়েছি। বাড়ির পথে রওনা হবো বিকেল চারটার পর। প্রতিদিন এভাবেই চলে। আমাদের বেতন ২২০ আর তাদের (পুরুষের) বেতন ৫০০।

নাম না প্রকাশের শর্তে অভিজাত গ্রুপ অব কোম্পানির অনেক নারী শ্রমিক বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে মজুরি পাই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এ দিয়ে সন্তানের লেখাপড়া আর সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। আমরা যদি পুরুষের সমান মজুরি পাই তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে। কিন্তু মালিককে বললে তারা বিষয়টি গুরুত্ব দেন না।

ডোমারের চিকনমাটি রোডে তামাকের মিলে শ্রমিকের কাজ করেন রাবেয়া বেওয়া। তিনি বলেন, ‘নারী-পুরুষ বেতনবৈষম্য বুঝি না। কাম করন নাগবো, খাওন নাগবো। বাঁচন নাগবো। এর বাইরের চিন্তা আমাগোর মাথায় আহে না।’

টেংগনমারী এলাকার মেরিনা বেগম বলেন, মাঠে সব ধরনের কাজ করি, পুরুষেরা মজুরি বেশি পায়। আমরা পুরুষের তুলনায় বেশি সময় ধরে কাজ করি। কাজের মধ্যে পুরুষেরা বিশ্রামের বিরতি নিলেও আমরা তেমন বিশ্রাম নিই না। কিন্তু পুরুষ শ্রমিকরা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরি পেলেও আমরা পাই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

নুরবানু আক্তার নামে এক ভাটা শ্রমিক বলেন, কাজের সময় পুরুষরা তাও এদিক ওদিক যায়। আমরা মেয়েরা দুপুরের বিরতি ছাড়া পুরো সময়টাতেই কাজ করি। তারপরও ওদের মজুরি আমাদের চেয়ে বেশি।

সমান শ্রম দিয়েও নারীর মজুরি পুরুষের অর্ধেক

সাপ্তাহিক ছুটি নেই উল্লেখ করে শ্রমিক নুরবানু আক্তার বলেন, ছুটিছাটা নেই। কাজে না এলে মজুরি নেই। বাজার, কেনাকাটা, থাকা, সব নিজেদের। বছরে ৫-৬ মাস এই কাজ চলে। কিছু সময় শরীরের অবস্থা এত নাজুক থাকে যে বাকি সময় অন্য কোনো কাজ করার ক্ষমতা থাকে না।

ডোমার শালকী ব্রিকসের শ্রমিক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ভাটায় ফজরে আসি আর বিকেল ৫টায় চলে যাই। সারাদিন কাজ করে মজুরি পাই ৫০০ টাকা। আর একই কাজে নারী শ্রমিকরা পায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এ টাকা দিয়ে সংসার চলে না, তারপরও খুব কষ্টে চলতে হচ্ছে। মালিক যদি বেতন না বাড়ায় আমাদের কিছু করার নেই। বেশি কিছু বললে কাল থেকে আসা বন্ধ করে দেবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নীলফামারীর নারী নেত্রী সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আরিফা সুলতানা লাভলী জাগো নিউজকে বলেন, পুরুষশাসিত সমাজে তাল মিলিয়ে সমান কাজ করলেও নারীরা মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। অথচ প্রতিবছর শ্রমিক দিবস, নারী দিবস পালিত হয়। সকল কাজে নারী-পুরুষের সমঅধিকারের কথা বলা হয়। কিন্তু ন্যায্য মজুরির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের দেশের নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। তারা কর্মক্ষেত্রে সফলতা দেখাচ্ছেন। যে যেখানে আছেন সেখান থেকেই বৈষম্য দূর করার জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। তাহলে বৈষম্য ধীরে ধীরে কমে আসবে।

এ বিষয়ে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিসুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি কাজ টিআর, কাবিখা, কর্মসৃজনসহ বিভিন্ন প্রকল্পে নারী পুরুষের সমান মজুরি দেওয়া হয়। বেসরকারি ও মালিকানাধীন কাজেও নারী পুরুষের মজুরি বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করছি।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।