ভৈরবের পাইকারি মার্কেটে জমে উঠেছে পাদুকা বেচাকেনা

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশিত: ০৫:২৬ পিএম, ০২ এপ্রিল ২০২৪

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জমে উঠেছে পাইকারি পাদুকা (জুতা) মার্কেট। তবে বাজারে কেমিক্যাল সংকট ও সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাদুকা উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে। অপরদিকে হাতে তৈরি পাদুকা উৎপাদন কারখানায় দিন-রাত জুতা উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।

ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা জানান, যেসব পাদুকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পূর্বে থেকে কেমিক্যাল ও সরঞ্জাম মজুদ ছিল তারা উৎপাদন করতে পারছেন। জুতা তৈরির বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিতে গতবারের তুলনায় জুতা তৈরি ও আমদানি-রপ্তানি কমে অর্ধেকে নেমেছে। ভৈরবে ২-৩ হাজার ছোট-বড় কারখানা রয়েছে। তাদের মধ্য কেমিক্যালের সাহায্যে পিও উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে ৩০-৩৫টি। শহর ও গ্রাম জুড়ে এসব কারখানায় নারী ও পুরুষসহ দেড় লাখ শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

কারখানাগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, হাতে তৈরি জুতা শ্রমিকরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে জিনিসপত্রের দাম বেশি থাকায় যেখানে দিনে ২০-২৪ জোড়া জুতা তৈরি হতো সেখানে ১০-১২ জোড়া জুতা তৈরি হচ্ছে। তবে কেমিক্যাল সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে ছোট-বড় শতাধিক কারখানা। কারখানাগুলোতে শুধু হাতে তৈরি জুতা উৎপাদন চলছে। যাদের মজুদ কেমিক্যাল ও কাঁচামাল রয়েছে তারাই মেশিনগুলো চালাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এ মৌসুমে ব্যবসা তো হবে না বরং লোকসান গুনতে হবে।

ভৈরবের পাইকারি মার্কেটে জমে উঠেছে পাদুকা বেচাকেনা

গাছতলা ঘাট এলাকার পাদুকা কারখানার মালিক মিয়ার উদ্দিন অপু বলেন, বাজারে সরঞ্জামের দাম বাড়ার কারণে জুতা উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। তাই বাজারে গত বারের চেয়ে এ বছর জুতার দাম বেড়েছে। বাড়তি দামে সরঞ্জাম কিনে যদি বাড়তি দামে জুতা বিক্রি করতে না পারি তাহলে আমরা তো এ ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবো না।

ভৈরবের হাজী মার্কেটের এএম সুজের মালিক এমদাদ মিয়া বলেন, বেচাকেনা খুব তবে মালের দাম অনেকটা বেড়েছে। পাইকাররা মালের দাম দেখে কম পরিমাণে মাল কিনছেন। গত বছর যেখানে একজন পাইকার এক লাখ টাকা দিয়ে ২০ ডজন মাল কিনতে পারতো আর এ বছর এক লাখ টাকা দিয়ে ১০ ডজন মাল কিনতে পারছেন।

ভৈরবের পাইকারি মার্কেটে জমে উঠেছে পাদুকা বেচাকেনা

পাদুকা কারখানা মালিক রফিক ভান্ডারি বলেন, বাজারে পাদুকার বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে গতবার বেশি লাভবান হয়েছিল। এবার পাদুকার সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় গতবারের মত লাভবান হতে পারবেন না।

পাইকারি পাদুকা বিক্রেতা মো. বাদল মিয়া বলেন, শবে বরাতের নামাজের পর থেকে পাদুকা ব্যবসার মৌসুম শুরু হয়। এরপর থেকে ভৈরবের পাইকারি বাজারে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাদুকা ব্যবসায়ীরা পাইকারি দামে জুতা কিনতে আসতে শুরু করেন। বেচাকেনা জমে উঠেছে তবে গতবারের মত কিছু কম বেচাকেনা হচ্ছে। যেহেতু ঈদের আরও বেশ কয়েকদিন বাকি রয়েছে তাই ব্যবসায়ীরা আশা করছেন বেচাকেনা আরও বাড়বে।

ভৈরবের পাইকারি মার্কেটে জমে উঠেছে পাদুকা বেচাকেনা

আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক কারখানা মালিক জানান, রমজানের শুরুর দিকে বাজারে সরঞ্জাম ও পিও কেমিক্যালের সংকট থাকায় কারখানাগুলি বেশি পরিমাণে পাদুকা তৈরি করতে পারেনি। যার ফলে এবছর বেশি লাভবান হতে পারবে না।

ভৈরব পাদুকা কারখানা মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আল আমিন বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর পাদুকা ব্যবসা অনেকটা কমেছে। করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে দেশের সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পাদুকা শিল্পেরও সব কেমিক্যালসহ কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। রমজানের শুরুতে কেমিক্যাল সংকটে জুতাও ঠিকমতো উৎপাদন হচ্ছে না। সেজন্য কারখানায় পাদুকার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাই বাজারে দাম বেড়েছে।

রাজীবুল হাসান/আরএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।